সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ জুলাই, ২০১৭ ২১:৪৮

আপনি কি স্বয়ম্ভু ভগবান, সংসদে বাদলের ক্ষোভ

প্রধান বিচারপতির প্রতি সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাসদ একাংশের নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল। তিনি প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কি স্বয়ম্ভু ভগবান যে আপনি নিজেই নিজের বিচার করবেন। আপনি কি আল্লাহ হয়ে গেছেন, যে বলিলাম আর হয়ে গেল? সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের রায় নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বাদল এসব মন্তব্য করেন।

রোববার জাতীয় সংসদের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নাম উল্লেখ না করে কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। এ সময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বাদল বলেন, ‘বিচারক যদি এমন কাজ করে, তাতে তার বিচারক থাকা চলে না। অবিবেচনাপ্রসূত কাজ করে, অপরাধ করে তাহলে তার সাজাটা কীভাবে হবে? এখানে সব বিচারকের সাজার প্রশ্ন আসেনি। যিনি অপরাধ করেছেন তার সাজার বিষয় এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বলতে চাই। ন্যাচারাল জাস্টিস বলে একটা কথা আছে। সেই ন্যাচারাল জাস্টিসের ব্যাপারে বক্তব্য হলো- আপনি আপনার বিচার করতে পারেন না। আপনি কি স্বয়ম্ভু ভগবান যে আপনি নিজেই নিজের বিচার করবেন। আপনি কি আল্লাহ হয়ে গেছেন, যে বলিলাম আর হয়ে গেল?’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ইমপিচমেন্ট (অপসারণ) হয় এখানে (সংসদে)। প্রধানমন্ত্রীর ইমপিচমেন্ট হয় এখানে। স্পিকারের ইমপিচমেন্ট হয় এখানে। আর আপনি (প্রধান বিচারপতি) বলছেন আমার বিচার আমি করব।’

বাদল বলেন, ‘সংসদের কোনো আইন যদি বেসিক ট্রাকচার ক্ষতিগ্রস্ত করে সেটা আদালত দেখতে পারেন। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বেসিক ট্রাকচারের কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। ৯৬ অনুচ্ছেদ আমরা প্রতিস্থাপন করেছিলাম। এটা বেসিক ট্রাকচারের কোথায় আঘাত করেছে আমরা দেখতে চাই।’

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে গত ৩ জুলাই আপিল বিভাগের রায় দিয়েছেন। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা হারিয়েছে সংসদ। বর্তমান সরকার ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রতিস্থাপিত করেছিল। ওই সংবিধানের ৯৬ ধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারত সংসদ।

সোমবার (৩ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর ছয় সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ বলেন, এর ফলে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ হয়েছে। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে না। আগের মতোই জুডিশিয়ালেই বিষয়টি দেখা হবে।

গত বছরের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা রায় দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র। রায়ে আরও বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে। আদালত রায়ে আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সংসদ সদস্যদের সবসময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারেন না। যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সাংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

সংবিধানে এই সংশোধনী বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন আদালত। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে মামলার ৫ মে রায় দেন হাই কোর্ট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত