সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ জুলাই, ২০১৭ ১৮:১১

ঢাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী হাতাহাতি: উপাচার্য প্যানেল চূড়ান্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য আহূত বিশেষ অধিবেশনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় পাঁচ শিক্ষক আহত হয়েছেন। শনিবার (২৯ জুলাই) বিকেল পৌনে চার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। তবে বাইরে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও সিনেটে উপাচার্য প্যানেল চূড়ান্ত হয়েছে।

সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম আমজাদ আলী জানান, আহতদের মধ্যে প্রভাষক রাকিবুল হাসানের বাম হাতের একটি আঙুল ভেঙে যায়। এ ঘটনায় আহত অন্য শিক্ষকরা হলেন, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রভাষক রাকিবুল হাসান, ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মুহিত, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক বাহাউদ্দিন ও সহকারী প্রক্টর রবিউল হক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাকসু নির্বাচনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবিতে শনিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সিনেট ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। তারা সিনেট ভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং শিক্ষকরা বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ জানান, আজ (শনিবার) বিকেলে সিনেট অধিবেশনের বিরোধিতা করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সদস্যরা যখন সিনেট ভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে যান, তখন তিনি ও কয়েকজন শিক্ষক তাদের বাধা দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রাকিবুল হাসানের বাম হাতের একটি আঙুল ভেঙে যায়। এখন তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ হাতাহাতির সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঢাবির উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সিনেট অধিবেশনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় চড়াও হন তিনি।

ওই শিক্ষকের নাম কাজী ফারুখ হোসেন। তিনি জবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক। এ ব্যাপারে ঢাবির প্রক্টর বলছেন, কাজী ফারুখ হোসেন ঢাবিতে শিক্ষক হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।

নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের সময় ডাকসুর পাঁচজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ওই পাঁচটি পদ খালি রেখেই সিনেটের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। ডাকসু নির্বাচন না করে আগে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করায় এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

এদিকে, শিক্ষকদের মধ্যে বিএনপি সমর্থকদের বর্জন এবং সরকার সমর্থকদের একাংশের আপত্তি এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে শনিবার উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নে সিনেটের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও নীল দলের আহ্বায়ক আবদুল আজিজের প্যানেল পাস হয় বলে সিনেট সদস্য শফিউল আলম ভূইয়া জানিয়েছেন। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবায়েতুল ইসলাম প্যানেলটি প্রস্তাব করেন। তা সমর্থন করেন আইন অনুষদের ডিন মো. রহমত উল্লাহ।

এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতেও গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক, তাতে হাই কোর্ট সিনেটের এই অধিবেশন স্থগিত করে আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু হাই কোর্টের আদেশ আপিল বিভাগ স্থগিত করার পর এই নির্বাচনের বাধা কেটে যায়।

এখন সিনেটে মনোনীত তিনজনের নাম যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে। তার মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেবেন তিনি। ভোটাভুটি হলে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া তিনজনের নামের প্রস্তাব যেত রাষ্ট্রপতির কাছে।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের বর্তমান মেয়াদ শেষের (২৪ অগাস্ট) আগে সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্ধারণ না করে সিনেটে উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকেই। কয়েকজন শিক্ষকসহ ১৫ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট এই সভা আটকাতে হাই কোর্টে রিট আবেদন করে স্থগিতাদেশও পেয়েছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগের আদেশে সভার পথ খুলে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুজন উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সরকার মনোনীত পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা, স্পিকার মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য, আচার্য মনোনীত পাঁচজন শিক্ষাবিদ, সিন্ডিকেট মনোনীত গবেষণা সংস্থার পাঁচজন প্রতিনিধি, অধিভুক্ত কলেজগুলোর পাঁচজন অধ্যক্ষ, ১০ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ও পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকেন সিনেটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, বর্তমানে ৫০ জন সিনেট সদস্য নেই। সিন্ডিকেট মনোনীত গবেষণা সংস্থার পাঁচজন প্রতিনিধি, অধিভুক্ত কলেজগুলোর পাঁচজন অধ্যক্ষ ও ১০ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ও পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি বর্তমান সিনেটে নেই।

একে ‘খণ্ডিত সিনেট’ আখ্যায়িত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নীল দলের সাদেকা হালিম, যিনি রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট হিসেবে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন।

নীল দলের সাবেক আহ্বায়ক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “অসম্পূর্ণ সিনেটের মধ্য দিয়ে উপাচার্য প্যানেল মনোনয়ন করা হলে সেটি কখনোই বৈধ হবে না। এ নির্বাচন জাতির পিতার দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের লঙ্ঘন।” এজন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নেতা সামাদ, যিনিও রিট আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন।

নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সাদেকা হালিম বলেন, “এই মতবিরোধ হয়ত থাকবে কেটে যাবে। আমরা নিজের ঘরের মধ্যে নিজের পরিষ্কার করতে চাচ্ছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে পারি না।”

২৫ জন নির্বাচিত গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিসহ ৫০ জন প্রতিনিধি না থাকায় উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নে সিনেট অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সাদা দল। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান বলেন, “যথাসময়ে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন না করে এবং অন্যান্য সদস্য পদ খালি রেখে সিনেটকে অনেকাংশেই অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। ফলে এ অকার্যকর সিনেট দিয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত