২৭ মে, ২০১৫ ১৫:৩০
ট্রেড ইউনিয়ন গঠন নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের বাংলাদেশ শাখায় শ্রম অসন্তোষ বাড়ছে। শেভরন বাংলাদেশ ব্লক ১৩ ও ১৪ লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারীরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদনও করেছে সংগঠনটি। তবে শেভরনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে কেন্দ্র করে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিক নেতারা। শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন তারা।
২৫ মে শ্রম মন্ত্রণালয়ে দেয়া ওই চিঠিতে শেভরন বাংলাদেশ ব্লক ১৩ ও ১৪ লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন জানায়, রেজিস্টার্ড অব ট্রেড ইউনিয়নের যুগ্ম পরিচালকের দফতরে ১৮ মে নিবন্ধনের আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এর পর থেকেই শেভরনের কিছু কর্মকর্তা বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা চায় তারা।
শেভরন বাংলাদেশ ব্লক ১৩ ও ১৪ লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বলেন, ২০ মে শ্রম আদালতের দ্বারস্থ হন শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ অবস্থায় আদালত যে কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি বন্ধ, চাকরি থেকে বরখাস্ত বা বদলি না করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি কেন অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করা হবে না, এ বিষয়ে জবাব দিতে দুই সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আদালতের নির্দেশনাও মানছে না কর্তৃপক্ষ। আমাদের ওপর হুমকি অব্যাহত আছে। গতকাল অনেককেই অফিসে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, গত কয়েক দিন শেভরন কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়ে আসছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত শ্রম আইনের বিধি-বিধান মানা হচ্ছে না। তাই ২০৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী মিলে ইউনিয়ন গঠনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে শেভরনের কমিউনিকেশন ম্যানেজার শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, শেভরন সব ধরনের নিয়ম-কানুন ও বিধিমালা মেনে চলে।
একই সঙ্গে শ্রমিকদের অধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে সমর্থন করে। এ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি তৈরি করা হয় না।
এর আগে চাকরিচ্যুতির বিষয়ে শেভরনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিবিয়ানায় সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ফলে পরিবহন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি ও চালকের সংখ্যা কমানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
যদিও এ ব্যাপারে রহমত উল্লাহ বলেন, প্রকল্প এলাকায় কাজ শেষ হয়ে গেলে, প্রকল্পের কর্মচারীদের চাকরি যেতে পারে। কিন্তু ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ের কর্মচারীরা হুমকির মধ্যে রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের অধিকাংশ শ্রমিক ঢাকায় কাজ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শেভরনের পরিচালন ব্যয়ের পুরোটাই কস্ট রিকভারি হিসেবে গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে পরিশোধ করা হয়। এর বাইরে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সুবিধা নিয়ে থাকে শেভরন। পিএসসি অনুসারে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয় না তাদের। তার পরও তারা ট্যাক্স কার্ড পায়। এর বাইরে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সুপারিশে গ্যাসক্ষেত্রের জন্য বিভিন্ন যন্ত্র আমদানিতেও কর অবকাশ সুবিধা নিয়ে থাকে। বিবিয়ানা ও জালালাবাদে বাড়তি সুযোগ নিতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। বিবিয়ানা থেকে অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন ও জালালাবাদে এলাকা সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছে শেভরন। যদিও বর্তমানে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকেই অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে।
পেট্রোবাংলার উৎপাদন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল উৎপাদন হয়েছে ৫৩ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। জালালাবাদে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ২৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট। আর বিবিয়ানায় সম্প্রতি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট করা হয়েছে। গতকাল উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ২১১ মিলিয়ন ঘনফুট। যদিও বাড়তি উৎপাদনের কারণে গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত হওয়ার নজির আছে দেশে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বাড়তি উৎপাদনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পেট্রোবাংলা। কোম্পানিটি গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে গ্যাস খাতে এককভাবে আধিপত্য রয়েছে শেভরনের। দৈনিক শেভরন তুলছে ১ হাজার ৪৫১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, যা মোট উৎপাদনের ৫৪ শতাংশ।
আপনার মন্তব্য