নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ জুন, ২০১৫ ১৪:৫৬

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে Genocide Denial Law চাই’ দাবিতে উত্তাল অনলাইন

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে Genocide Denial Law চাই’ শিরোনামে এক ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিকৃতির বিপক্ষে অবস্থান নিতে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। একই সঙ্গে তারা অফলাইনেও এ কর্মসূচি ছড়িয়ে দিতে নিজেদেরকে সংগঠিত করছে।

ফেসবুক ইভেন্টটি আজ (বৃহস্পতিবার) খোলা হলেও ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ফেসবুক ইভেন্টে ‘গোয়িং’ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে এমন প্রজন্ম নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছে এবং একইভাবে নিজেদের টাইমলাইনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে আইন প্রণয়নেরও দাবি জানাচ্ছে।

ঘোষিত অফলাইন কর্মসূচি অনুযায়ি ৯ জুন টিএসসি এবং আগামি ১৩ জুন প্রেসক্লাবে বিকেল ৪টায় নিজের শেকড় আর অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে সমবেত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে এবং পরে দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে আইন মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। 

কী কারণে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে Genocide Denial Law চাই’ তার স্বপক্ষে ইভেন্টের বর্ণনায় বলা হয়েছে- ‘আমাদের বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। থাকবেই বা কেনো, বারবার ঘুরে দাঁড়ানো মানুষের দেশ এটা, দ্রোহ আর প্রেমের দেশ এটা। আমাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি, পারবে না। রক্ত দিতে এদেশের মানুষ ভয় পায়নি কখনোই, বারবার মরে অধিকার আদায় করে নিয়েছে, নিজের ভাষার,নিজের সংস্কৃতির, নিজের ভূখণ্ডের, নিজের অস্তিত্বের।

এই দেশটার জন্যে, এই মানচিত্র আর পতাকাটার জন্যে বাংলা মায়ের সন্তানেরা অকাতরে জীবন দিয়েছে। এই দেশের মানুষেরা আনন্দে মনের কথা বলতে পারবে, শুধু এটুকু স্বপ্নের জন্যে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত গুলি চালিয়ে গিয়েছে, আপন মনে হাসতে পারবে, খেলতে পারবে, পড়াশোনা করতে পারবে, ভালোবাসতে পারবে এইটুকু অধিকারের জন্যে বুকে মাইন বেঁধে ট্যাংক উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মৃত্যুকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না।

যে মানুষগুলো আমাদের জন্যে নিজেদের জীবন দিয়ে দিলো, তাদের স্বপ্নগুলো আমাদের পুরণ করতে হবে। তাদের অবদানকে অস্বীকার করে, তাদের স্বপ্নকে, তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে কেউ এদেশে থাকতে পারবে না। কথা বলার অধিকার এনে দিলো যে মানুষগুলো, বাকস্বাধীনতার অধিকার এনে দিলো যে মানুষগুলো, তাদের অস্বীকার করার অর্থ নিজের শেকড়কে অস্বীকার করা। নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। এটা হতে দেয়া যাবে না। যারা এই দেশটাকেই স্বীকার করে না, যারা এই দেশের জন্মযুদ্ধের ইতিহাসটাই স্বীকার করে না, এই দেশের কোনো আইন তাদের জন্যে না, এই দেশের কোনো অধিকার- কোনো সুযোগসুবিধা তাদের জন্যে না; হতে পারে না

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজি গণহত্যায় অসংখ্য মানুষ মারা যায়। ইউরোপের ১৪টি দেশে সেই গণহত্যাকে অস্বীকার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বছরেই ১১ ফেব্রুয়ারি ফরাসি ইতিহাসবিদ Vincent Reynouard কে দুবছরের জেল দেয়া হয়, Laws against Holocaust Denial এর মাধ্যমে। ইহুদীনিধন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পুরো ইউরোপব্যাপী গণহত্যা, আর্মেনীয় গণহত্যাসহ সে সময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ সমর্থনের কারণে গত ১৬ বছরে উনিশজন প্রতিষ্ঠিত সুপরিচিত রাজনীতিবিদ, ঐতিহাসিক এবং ক্যাথলিক ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেল জরিমানা করা হয়েছে।

খোদ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যারা সবসময় আমাদের যুদ্ধাপরাধীর বিচারে নাক গলানোর চেষ্টা করে, তারাই ২০০৭ সালে Gayssot Act এর অনুরূপ আইন পাস করে, ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালকে স্বীকার করে অভিযুক্তকে অনধিক তিন বছরের সাজা দেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত জানায়।

আমাদের দাবি খুব সাধারণ একটি দাবি। বাংলাদেশে Genocide Denial Law চাই। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তার ইতিহাসকে বিকৃত করে, এমন ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন হোক, সে আইনের প্রয়োগ হোক। কেউ যেনো আর কখনোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা, মুক্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ড অথবা একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের কুকীর্তি সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য না রাখতে পারে। এমন যেকোনো কিছুকে যেনো এদেশের আইনে বিচার করা হয়’।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত