নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ জুন, ২০১৫ ০০:৪৮

রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভুয়া ছবি ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি

ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনের ভুয়া ছবি ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক অসংখ্য পোষ্ট দেয়া হচ্ছে।গত কয়েকদিন ধরে এসব পোষ্টের মধ্যে দিয়ে  হিংসা ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে দেখা যায়।

মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে সাগরে ভাসমান হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বড় একটি সংখ্যার রোহিঙ্গা মুসলিমরা থাকায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিয়ে আলোচনা চলার সময়ে এসব ভুয়া ছবি ছড়ানো হল।

বিশ্বের কোন গণমাধ্যমেই মিয়ানমারে এই মুহূর্তে কোন গণহত্যার ঘটার খবর পাওয়া যায়নি। যদিও সেখানে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘদিন থেকে  রাষ্ট্রীয়ভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন বলে বলে খবর রয়েছে। তবে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যা বলে ছবিগুলো ছড়ানো হচ্ছে তার বেশিরভাগই ভুয়া। বিভিন্ন পেজ ও ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে ছড়ানো এসব ছবি নিয়ে গুগল ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা গেছে এসব ছবির কোনটিই মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নয়।  কিন্তু কোন একটি গোষ্ঠী ভুয়া ছবি ছড়িয়েই ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটানোর উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।

উস্কানিমূলক এসব পোষ্টে  দেখা যায় থাইল্যান্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে আটক থেকে শুরু করে  বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটা ঘটনার ছবি মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে।

একটি ছবিতে দেখা যায়   চীনে গণতন্ত্রের দাবীতে একজনের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল তাকেও মায়ানমারের রোহিঙ্গা বলে প্রচার করেছে বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ।


আরেকটি ছবিতে দেখা যায়  কঙ্গোতে ২০১০ সালে গ্যাস ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিল ২২০ জন। এসব লোকদের লাশের ছবিকে রোহিঙ্গাদের বলে প্রচার করা হয়েছে অনেকগুলো ফেসবুক পেজ ও একাউন্ট থেকে।

শ্রীলঙ্কায় এক নারীর ধর্ষিত দেহের ছবিকেও রোহিঙ্গা নারীর দেহ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।
খেলনার বন্দুক নিয়ে খেলারত এক বার্মিজ শিশুর বিখ্যাত আলোকচিত্রকে প্রচার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের গুলি করার ছবি হিসেবে।অন্য আরেকটি ছবিতে দেখা যায় চীনের সাংহাই প্রদেশে ভূমিকম্পে নিহতদের লাশের ছবিকেও রোহিঙ্গা বলে প্রচার করা হচ্ছে। এরকমই বিভিন্ন সময়ে ঘটা আরও বিভিন্ন ঘটনার বহু ছবি রোহিঙ্গা নির্যাতন ও হত্যার ছবি বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

অনেকে এসব ছবি দেখে বুঝে না বুঝে দেদারসে শেয়ার দিচ্ছেন। কেউ কেউ বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধদের পাল্টা হামলা করার হুমকি দিচ্ছেন প্রকাশ্যে। ফাহাদ চৌধুরী নামের সিলেটের বাসিন্দা এক ব্যক্তি ফেসবুকের একটা কেনা বেচা সংক্রান্ত গ্রুপে 'আল্লাহর কসম' দিয়ে বৌদ্ধদের কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দেন এবং বৌদ্ধ মেয়েদের ধর্ষণ করার কথাও লিখেন।




কারা এসব ভুয়া ছবির এডিট করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে তা পরিষ্কার করে জানা যায় নি। তবে ২০১৩ সালে রামুতেও এমনই এডিটকৃত একটি ভুয়া ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে উত্তম বড়ুয়া নামে একজনকে ট্যাগ করে সাম্প্রদায়ি্ক উস্কানি তৈরি করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের  উপর হামলা করে তাদের মন্দির ও বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছিল। তখনকার ঘটনায় ওই এলাকার স্থানীয় জামাত-শিবির কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গিয়েছিল।

দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

মোঃ শহিদুল ইসলাম নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেন- ভুয়া ছবি ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে একটি মহল। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। আইসিটি আইনে এসব কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

অনলাইন এক্টিভিষ্ট শুভ ধর বলেন- মায়ানমারে রোহিঙ্গারা সেদেশের কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন, নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি যেসব ছবি রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বলে প্রচার করা হচ্ছে এগুলো ভুয়া। ভুয়া ছবি ছড়িয়ে পরিস্থিতি রগরগে করতে চায় একটি গোষ্ঠী। ফেসবুক যেমন আমাদের প্রত্যেকদিন নানা ধরনের তথ্য দিচ্ছে তেমন নানা ভুয়া তথ্য দিয়েও বিভ্রান্ত করছে।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত