নিউজ ডেস্ক

০৮ জুন, ২০১৫ ১২:৩২

‘নতুন প্রজন্ম- নয়া দিশা’ : বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণা

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার পূনর্ব্যক্ত করল বাংলাদেশ ও ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুই দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে রোববার যৌথ ঘোষণায় ওই অঙ্গীকার করা হয়। ৬৫ দফার ওই যৌথ ঘোষণায় বাণিজ্য প্রসার, তিস্তার পানি বন্টন, যোগাযোগ সহজ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার রয়েছে।

যৌথ ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়নের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এছাড়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণসহ এ অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনতে শেখ হাসিনার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাদের ভারতের মাটিতে সমাহিত করা হয়েছে তাদের দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন। বাংলাদেশের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া এককভাবে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করবে না ভারত। ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সফরের শেষ দিনে রোববার (৭ জুন) প্রকাশিত ৬৫ দফা যৌথ ঘোষণায়ও এসব কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ পরিকল্পনায় গ্রহণ করা হবে না। টিপাইমুখ জলবিদ্যুতকেন্দ্রে ভারত একতরফাভাবে এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না, যা বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আইনগত কারণে আপাতত সেই প্রকল্পের কাজ বিদ্যমান অবস্থায় এগিয়ে নেয়া হবে না বলেও ভারত জোর দিয়ে বলেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ ঘোষণায় এ কথা বলা হয়েছে। এছাড়া উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন নতুন পথ উন্মোচনে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর অব্যাহত রাখতে একমত হয়েছে। ‘নতুন প্রজন্ম- নয়া দিশা’ শিরোনামের এ যৌথ ঘোষণা পারস্পরিক সহযোগিতার পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা ঘটাবে বলে দুই দেশের তরফ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, গত বছর জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) তৃতীয় বৈঠকে অর্জিত অগ্রগতির প্রশংসা করে দুই দেশ চলতি বছর ঢাকায় কমিশনের চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠানে সম্মত হয়েছে। এছাড়া পদ্মা নদীতে যৌথভাবে বাঁধ নির্মাণে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক এবং দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় দুপক্ষের মধ্যে বিদ্যমান উষ্ণতা, সৌহার্দ ও সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার আলোচনায় উভয় নেতা ইতিহাস, আচার, আকাঙ্খায় দুই দেশের অভিন্ন বাঁধনের কথা স্মরণ করেন।

উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে এবং এ অঞ্চলের সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সার্বভৌমত্ব, সমতা, মৈত্রী, বিশ্বাস ও সমঝোতার ভিত্তিতে কার্যকর, পরিণত ও বাস্তবানুগ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন পর্বে পদার্পণ করেছে বলে নেতৃদ্বয় উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সংযোগ বৃদ্ধিতে নিত্যনতুন ধ্যান-ধারণার প্রতি সমর্থনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার এবং সে সম্পর্ককে গভীরতর ও অর্থবহ করতে তার গৃহীত যুগান্তকারী উদ্যোগগুলোরও প্রশংসা করেন।

এতে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বসম্মতভাবে স্থলসীমান্ত বিল পাসের ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক দল ও নেতাদের দারুণ বোঝাপড়ার প্রশংসা করেন। এ-সংক্রান্ত চুক্তি ও প্রটোকল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও ভারত একটি কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছে। যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারত বিজিবির কয়েকটি সীমান্ত চৌকির (বিওপি) নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের জন্য একটি প্রমিত পরিচালন পদ্ধতির (এসওপি) আওতায় ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহারের প্রশ্নেও সমঝোতায় পৌঁছেছে।

বাগেরহাটের রামপালে নির্মীয়মাণ বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার প্লান্ট কাজের অগ্রগতিতে উভয় দেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলেও যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে বিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে বিষয়টির অনুকূল বিবেচনায় সম্মত হয়েছে ভারত। জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সচিব পর্যায়ে নিয়মিত বার্ষিক বৈঠক শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল সরবরাহের সুবিধার্থে শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ পাইপলাইন নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য যৌথ উদ্যোগে একটি কোম্পানি গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে দুই প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

নৌ-চলাচল প্রটোকলের আওতায় ন্যূনতম চলতি নাব্যতাসহ (লিস্ট অ্যাভেলেবল ডেপথ) দুই দেশের উপকূলীয় নৌপথ উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অর্থায়নের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে দুই প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়া জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দুই দেশের সহযোগিতা জোরদারের কথা ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞান গবেষণা, শিক্ষা, সৌরশক্তি ব্যবহার, টেলিভিশন সম্প্রচার, আবহাওয়া পূর্বাভাস, জলবায়ু পরিবর্তন সক্ষমতাসহ বেশক’টি ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেয়ার কথা বাংলাদেশ-ভারত যৌথ গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত