সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ মার্চ, ২০১৮ ২২:৫৯

বাবার কবরের পাশে মাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করলেন মাহি

বাবা ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ক’দিন আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বাবার শোকে মা আফসানা খানম টপিও চলে গেলেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মুখোমুখি হতে হয়েছে কঠিন বাস্তবতার। সেই বাস্তবতাকে সঙ্গী করেই নিজ হাতে মা আফসানা খানমকে বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছেন মাহি। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধান, বাবা-মাকে হারিয়ে একমাত্র সন্তান তামজিদ সুলতান মাহি (১৪) এখন নির্বাক নিস্তব্ধ।

শুক্রবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের কবরের পাশে স্ত্রী আফসানা খানমকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর খবরে ‘স্ট্রোকে’ আক্রান্ত হলে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস এ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল আফসানাকে। সেখানে ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শুক্রবার সকালে সাড়ে নয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এরপর বিকেল পাঁচটা ১৩ মিনিটে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে গাউছুল আজম জামে মসজিদে আফসানার নামাজের জানাজা হয়। পরে বনানী সামরিক কবরস্থানে স্বামী ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানকে কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আফসানা খানম টপি। আফসানার চাচা ইয়াদ আলী জানান, শুক্রবার ভোরেই আমরা জানতে পারি ওর (আফসানার) অবস্থা খারাপের দিকে। আমরা আসতে আসতে ওর অর্গানগুলো অকার্যকর হতে থাকে। পরে সাড়ে নয়টায় মারা যায়।

এ সময় হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম জানান, আমরা সম্ভব সব চেষ্টাই করেছি। কিন্তু আজ সকালেও উনার কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়। এরপর আর কিছু করার ছিল না। এ দিকে আফসানার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে এলে সেখানে এক আবেগঘন হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আবিদ-আফসানার উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের বাসায়।

ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে ২৮ বাংলাদেশীসহ ৫১ জনের মৃত্যু হয়। ওই ফ্লাইটের প্রধান বৈমানিক ছিলেন বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আবিদ সুলতান। ওই দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের মরদেহ রোববার দেশে ফিরিয়ে এনে আর্মি স্টেডিয়ামে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মাকে হাসপাতালে রেখে সেদিন বাবার লাশ নিতে বনানীতে যায় উত্তরার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্র মাহি।

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবনে দুর্ঘটনার দিন ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ক্যাপ্টেন আবিদ আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। কিন্তু পরদিন সকালে তারা আবিদের মৃত্যুর খবর দিলে ভেঙ্গে পড়েন আফসানা। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রথম মৃত্যু সংবাদটি শুনে কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না  আফসানা খানম। অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি বেঁচে আছেন জেনে একটু স্বাভাবিক হন। কিন্তু পরদিন যখন জানতে পারলেন আবিদ মারা গেছেন। তারপর থেকে তিনি একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিলেন।

রোববার সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে উত্তরা একটি ক্লিনিকে নেয়া হয়। নিউরোসায়েন্সে আনার পর আফসানা খানমের মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় আলামত খুঁজে পান চিকিৎসকরা। একটি মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সহযোগী অধ্যাপক সিরাজী শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড আফসানা খানমের অস্ত্রোপচার হয় ওই দিনই। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। ৬ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর (শুক্রবার) সকালে আফসানার মৃত্যু হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত