সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ জুন, ২০১৮ ১৬:২০

শাহজাহান বাচ্চু হত্যায় আনসার আল ইসলাম: মনিরুল

লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুর হত্যার নেপথ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আনসার আল ইসলামের অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাচ্চু হত্যার সঙ্গে মিল রয়েছে। ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

শুক্রবার (১৫ জুন) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার পর সিটিটিসি'র দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। হত্যার আলামত পর্যালোচনা, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান ও নিহত বাচ্চুর প্রোফাইল ঘেঁটে এটিকে জঙ্গিগোষ্ঠীর হত্যা বলেই মনে হয়েছে। আনসার আল ইসলামই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা সন্দেহ করছি।'

তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে আনসার আল ইসলামের গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’

এর আগে আনসার আল ইসলাম যত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেসব হত্যায় তারা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই প্রথমবার তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সালে মোহাম্মদপুরে রাকিব মামুন নামে এক ব্লগারকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো সাধারণত মানসম্পন্ন অস্ত্র নয়, যে কারণে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডে চাপাতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় তারা।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আনসার আল ইসলামের সদস্যরা মনে করে, চাপাতি তাদের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য অস্ত্র এবং এটি অস্ত্র আইনের আওতায় পড়ে না। এটি বাড়িতে রাখা যায়, কাছ থেকে টার্গেটকে সরাসরি হত্যায় ব্যবহার করা যায় বলে চাপাতি ব্যবহার করে এই সংগঠনটি।’

তিনি বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের সময় তাদের কাছে থাকা অস্ত্র পালানোর সময়ও ব্যবহার করে। লালমাটিয়ায় প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টার সময়ও তাদেরকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। আগ্নেয়াস্ত্র মূলত আত্মরক্ষার জন্য বা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তারা ব্যবহার করে না।'

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার স্থানটি যেহেতু খুবই জনবহুল ছিল, চাপাতি দিয়ে খুন করে পালানো সম্ভব নয়, এমন ধারণা থেকেই তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পরে লোকজন এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।'

শাহজাহান বাচ্চুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যালোচনা করে ইতোপূর্বে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হত্যার ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করছেন সিটিটিসি প্রধান।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (১১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কাকালদী গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে শাহজাহানের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার পূর্ব দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

শাহজাহান বাচ্চু ছিলেন ৯০ দশকের প্রকাশক, যিনি শুধু কবিতার বই প্রকাশ করতেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকার বিশাখা প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী শাহজাহান বাচ্চুর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের কাকালদি গ্রামে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত