সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ১১:৩০

রাজীবের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ

রাজধানীর দুই বাসের চাপায় হাত হারানোর পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে এক মাসের মধ্যে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে এ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

রোববার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। হাতটি বেরিয়ে ছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার বা ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। সাময়িক উন্নতির পর ১৬ এপ্রিল থেকে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাজীবের মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যায়। ওই দিন দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব হোসেন।

রাজীবের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। রাজীবের মৃত্যুর পরে মামলায় ‘অপরাধজনক প্রাণহানি’র অভিযোগ যুক্ত করা হয়।

রাজীবের মৃত্যুর ঘটনার জন্য হাই কোর্ট রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে। দুই বাস কর্তৃপক্ষ আপিল করলে উচ্চ আদালত মৃত্যুর কারণ নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেন। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

হাই কোর্টে জমা দেওয়া কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার জন্য স্বজন পরিবহনের বেপরোয়া চালনাই দায়ী। হালকা যানের চালককে দিয়ে ডাবল ডেকার চালানোর জন্য বিআরটিসিরও দায় রয়েছে।

এ বছরের ৩ এপ্রিল রাজীবের আহত হওয়ার এক বছর পূর্তির দিনে ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাই কোর্টে রিট করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি রুল শুনানির জন্য হাই কোর্টে মৌখিক আবেদন করেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে ১০ এপ্রিল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে কিছু পর্যেবেক্ষণসহ আদালত রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের রাজীব তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মাকে এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। রাজধানীর মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন স্নাতকে। কখনও টিউশনি করে, কখনও বা পার্টটাইম কাজ করে নিজে পড়াশোনা করেছেন এবং দুই ভাইকেও বানিয়েছেন কোরআনে হাফেজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত