সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:৩৮

২২ বছর ধরে কলকাতায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে (৭২) কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) এ এম জুলফিকার হায়াত তাকে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন।

এদিন আদালতে আসামিদের জন্য তৈরি লোহার খাঁচায় ওঠালে পাবলিক প্রসিকিউটরের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আবদুল মাজেদ জানান, সবশেষ ২২ বছর তিনি ভারতের কলকাতায় পালিয়ে ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে আবদুল মাজেদকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

এদিন আদালতে আনার পর প্রথমে তাকে সিএমএম আদালতে হাজতখানার মধ্যে প্রিজনভ্যানেই রাখা হয়। এরপর তাকে বেলা পৌনে ১টার দিকে সিএমএম আদালত ভবনের তৃতীয় তলার মুখ্য মহানগর হাকিমের এজলাসে ওঠানো হয়।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. জহুরুল হক এ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনে উল্লেখ করেন, আব্দুল মাজেদ ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানার বাটোমারা গ্রামের মৃত আলী মিয়া চৌধুরীর ছেলে। গত সোমবার ঢাকা মহানগর এলাকায় নিয়মিত টহল ও অভিযান ডিউটি করা কালে রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ আসামিকে গাবতলী বাস স্টান্ডের সামনে থেকে রিকশাযোগে যাওয়ার সময় সন্দেহজনকভাবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামি। দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তিনি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে ছিলেন। পড়ে তাকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাই তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেফতার না দেখানো পর্যন্ত জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে আটক রাখা প্রয়োজন।

ওই প্রতিবেদনের উপর সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ ও নন-জিআর শাখার জিআরও পুলিশ উপ-পুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমান শুনানি করে আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

শুনানিকালে আসামি পক্ষে কোন আইনজীবী ছিল না। শুনানি শেষে ঢাকার সিএমএম আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে জেলহাজতে পাঠানোর সংক্রান্ত মামলার খন্ডনথি সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত আদেশ দেওয়ার পর প্রিজনভ্যানে আসামি মাজেদকে কেরানীগঞ্জের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় পুলিশ।

এদিকে আদালতে শুনানি আগে কাঠগড়ায় সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবি, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট থাকা আসামি আব্দুল মাজেদকে প্রসিকিউটর হিরণের এতদিন কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ২২ বছর সে ভারতের কলকাতায় ছিলেন।  বঙ্গবন্ধুকে কেন হত্যা করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হত্যা করেননি বলে জানান। তাহলে পালিয়েছিলেন কেন প্রসিকিউটরের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি।

মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক রইলেন আরও ৫ জন। তারা হলেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। এরা বিভিন্ন দেশে পলাতক অবস্থায় আছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তবে হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদ- নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় প্রদান করেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মুত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপিল করেন। কিন্তু এরপর ছয় বছর আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচার-প্রক্রিয়া।

দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আপিলের অনুমতির প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকে। এর মধ্য দিয়ে ১৩ বছর ধরে চলা এই মামলার বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হয়।

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত