২১ এপ্রিল, ২০২০ ২১:২৭
ভাঙা ঘর ঠিক করতে ভিক্ষা করে টাকাটা জমিয়েছিলেন মোহাম্মদ নজিম উদ্দিন নামের একজন ভিক্ষুক। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে অসহায় হয়ে পড়া মানুষদের জন্যে নিজের জমানো ১০ হাজার টাকা দান করে দিলেন তিনি।
ঘটনাটি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের। ওই গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে ভিক্ষুক মোহাম্মদ নজিম উদ্দিন (৮০)। তার তিন ছেলে তিন মেয়ে। কিন্তু ভিক্ষে করেই জীবন চলে তার। তিনি যে শোবার ঘরে থাকেন সেটির খুব খারাপ অবস্থা। গত দুই বছর ধরে তিনি ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন। ইচ্ছে ছিল এবার বর্ষার আগেই ঘর ঠিক করবেন। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মানুষের দুঃখকষ্ট দেখে ওই বৃদ্ধ সরকারের করোনা তহবিলে এই টাকাটা জমা দিয়ে দেন।
মঙ্গলবার ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদের হাতে টাকা তুলে দেন তিনি।
মোহাম্মদ নজিম উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙা ঘর ঠিক করবার জন্য ভিক্ষা করে ১০ হাজার টাকা জমা করেছিলেন, সেটা আমি ইউএনও সাহেবের হাতে তুলে দিলাম।’
ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, একজন ভিক্ষুক অনেক কষ্ট করে ঘর তৈরি করার জন্য ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। সেই টাকা তিনি দরিদ্রদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আমার তহবিলে দান করলেন।'
বিজ্ঞাপন
এদিকে, একজন ভিক্ষুকের শেষ সঞ্চয় ১০ হাজার টাকা সরকারের করোনা তহবিলে দান করার সংবাদ অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই এই সংবাদ প্রচার করে এক সহায় সম্বলহীনের বিশাল হৃদয়ের প্রশংসা করছেন।
সাংবাদিক পিন্টু রঞ্জন অর্ক ফেসবুকে নজিম উদ্দিনের এই মহত্বের সংবাদ শেয়ার করে লিখেন, ❛❛মানুষের কাছে হাত পাতেন তিনি। পাই পাই করে জমিয়েছিলেন ১০ হাজার টাকা। নিজের বসতঘর মেরামতের জন্য। তিনি নজিম উদ্দিন। শেরপুরের ঝিনাইগাতির কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু করোনার এই সংকটকালে ভিক্ষাবৃত্তি করে পাওয়া সেই টাকা আজ সেখানকার ইউএনও'র হাতে তুলে দিয়েছেন।
বলেছেন, ‘আমি ভিক্ষা করে খাইয়ে-খুইচরে দুই বছরে এ টেহা জড়ো করছি। আমার ঘরডা ভাঙ্গে গেছে গ্যা। এহন আর ঘর-দরজা দিলাম না। দশে এহন (মানুষ) কষ্ট করতাছে, আমি এ টেহ্যা ইউএনও সাহেবের হাতে দিলাম। দশেরে দিয়ে দেখ, খাইয়ে বাঁচুক।’
বিজ্ঞাপন
রবিবার ইউএনও রুবেল মামুদের নির্দেশে স্থানীয় ‘দি প্যাসিফিক’ ক্লাবের সদস্যরা দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নে গান্ধীগাঁও গ্রামে যান। এ সময় নজিমুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাকে ইউএনর’র পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার কথা বলে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চান তারা। পরে নজিম ওই তালিকায় তার নাম না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন নজিম। একই সঙ্গে তিনি জানান, বসত ঘর মেরামত করার জন্য দুই বছরে ভিক্ষা করে জমিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। আজ সেই টাকায় তুলে দিলেন ইউএনও’র হাতে। নজিম উদ্দিনের জন্য ভালোবাসা।❜❜
আপনার মন্তব্য