সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:৩২

৫ টাকা খরচের বাংলাদেশের জীবাণুনাশকের স্বীকৃতি

মাত্র ৫ টাকা খরচায় বাংলাদেশের উদ্ভাবিত জীবাণুনাশকের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে হাত ধোয়ার জন্য দামি সাবান বা স্যানিটাইজারের বিকল্প হিসেবে ডিটারজেন্ট দিয়ে তৈরি এই 'সোপি ওয়াটার' বা সাবানপানি ব্যবহার করা যায়। এরমাধ্যমে মাত্র পাঁচ টাকা খরচে একটি পরিবারের এক সপ্তাহের বেশি সময়ের হাত ধোয়ার বন্দোবস্ত হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের তৈরি সর্বশেষ নির্দেশিকায় সোপি ওয়াটারের কার্যকারিতা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নির্দেশিকাটি প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।

বিজ্ঞাপন

সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিকল্প হিসেবে 'সোপি ওয়াটার'-এর ব্যবহার বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই হয়ে আসছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। কিন্তু ডব্লিউএইচওর মতো প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষের জন্য এক 'যুগান্তকারী' বিষয় বলে মনে করেন পানি ও স্যানিটেশন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সোপি ওয়াটারের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এ জন্যই যে এ যাবৎ এর কার্যকারিতা নিয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে, এর সব কটির নেতৃত্ব দিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।

ডব্লিউএইচওর স্বীকৃতির পর এখন স্যানিটেশন–সংক্রান্ত সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে সোপি ওয়াটারকে যুক্ত করতে চায় সিটি এলাকার বাইরে মানুষের পানি ও স্যানিটেশনের বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সোপি ওয়াটারকে সাবানপানিও বলা হয়। বাজারে পাওয়া যেকোনো ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়েই বানানো সম্ভব এই সোপি ওয়াটার। ২০০৮ সালে কেনিয়ার স্কুলে শিক্ষার্থীরা প্রথম এর ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু ওই দেশটিতে এর উপযোগিতা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি, কোনো দেশেই হয়নি।

আইসিডিডিআরবির এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশনস ইউনিট ২০১০ সাল থেকে এ নিয়ে একের পর এক গবেষণা পরিচালনা করতে থাকে বলে জানান ইউনিটের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এই অতিসাশ্রয়ী সাবানপানি তৈরির কৌশলও। দেড় লিটার পানির মধ্যে বাজারে পাওয়া কোনো ডিটারজেন্ট চার চা-চামচ মিলিয়ে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। ব্যস তৈরি হয়ে গেল। আর পুরো বিষয়টির জন্য সময় দরকার এক মিনিট, অর্থ খরচ পাঁচ টাকা।

মাহবুবুর রহমান বলেন, 'এমন সময় এ স্বীকৃতি এল, যখন হাত করোনার মতো ভয়ংকর মহামারিতে আমরা আক্রান্ত। আর এখন জীবন রক্ষার একটি অপরিহার্য শর্তে পরিণত হয়েছে হাত ধোয়া। দেশের নিম্ন আয়ের অসংখ্য মানুষ চাইলেও সাবানের ব্যবহার করতে পারে না। বিকল্প হিসেবে সোপি ওয়াটারের ব্যবহার ছিল অনেকের মধ্যে। তবে এখন এই স্বীকৃতি একটি বড় অর্জন।'

বিজ্ঞাপন

ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যেখানে অ্যালকোহল-পূর্ণ স্যানিটাইজার বা সাবান সম্ভব নয়, সেখানে ডিটারজেন্টের সঙ্গে পানির মিশ্রণে তৈরি তরল ব্যবহার করা যায়। পানি ও ডিটারজেন্ট অনুপাত কেমন হবে তা স্থানীয়ভাবে প্রাপ্য পণ্যের ওপর নির্ভর করবে।

হাতের জীবাণু নাশ করার ক্ষেত্রে সোপি ওয়াটারের কার্যকারিতা নিয়ে ট্রায়াল করেছেন আইসিডিডিআরবির সহকারী বিজ্ঞানী নূহ আমিন। তার গবেষণা আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন, দেড় লিটার পানির মধ্যে চার চা-চামচ ডিটারজেন্টের মিশ্রণ সাবান বা তরল হ্যান্ড ওয়াশের মতোই কার্যকর।

নূহ আমিন বলেন, 'পানি ও ডিটারজেন্টের অনুপাত, দীর্ঘ মেয়াদে এর কার্যকারিতা—এই সবই আমরা গবেষণায় দেখিয়েছি। পুরো গবেষণা প্রক্রিয়া আইসিডিডিআরবিই এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।' সূত্র: প্রথম আলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত