সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ মে, ২০২০ ২০:০৩

টি স্টল ও অফিস আদালত বন্ধে বিপর্যস্ত চা খাত

দেশে চা খাতের প্রধান ভোক্তা মূলত টি-স্টল ও ফুটপাতের টং দোকানগুলোর খদ্দেররাই। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার নীতি প্রয়োগে এসব টি-স্টল ও দোকান এখন বন্ধ রয়েছে। প্রধান ক্রেতা এসব দোকান ও স্টল বন্ধ থাকায় ধস নেমেছে দেশের চা-খাতের সার্বিক বিক্রিতে। এ অবস্থায় পণ্যটির বিপণন ও বাজারজাত নিয়ে কঠিন সময় পার করছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।

সারা দেশে নিত্যপণ্য ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-শপিংমল বন্ধ রয়েছে ২৬ মার্চ থেকে। এ কারণে চায়ের বিক্রিও এখন পড়তির দিকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে এ খাতের বিক্রি নেমে এসেছে এক-তৃতীয়াংশে। ধারাবাহিকভাবে সাধারণ ছুটি বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়ে গিয়েছে চা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

দেশে চায়ের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১০ কোটি কেজি। পণ্যটি ভোগের পরিমাণ বাড়ছে বার্ষিক ৪-৫ শতাংশ হারে। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশী চায়ের উৎপাদনও।

এর আগে ২০১৯ সালে দেশে চায়ের উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৮০ লাখ কেজি। বাগান মালিকদের পরিকল্পনা ছিল, চলতি বছর এ উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাবে। দেশে উৎপাদন বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে চায়ের আমদানি গত কয়েক বছর ধরেই উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে দেশে চলতি বছর সিংহভাগ চা-ই অবিক্রীত থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে চায়ের দাম কমে বাগান মালিকরা লোকসানের কবলে পড়তে পারেন বলে ধারণা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন



দেশে চা বিপণনসংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় একটি গ্রুপের চা বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, দেশের মানুষ প্রতিদিন প্রায় নয় কোটি কাপ চা পান করে থাকেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে গড়ে ৪০০ টন করে চা বিক্রি হয়। কিন্তু গত দুই মাসে বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ১৩০ ও ৮০ টন। আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার ৪০০ সাইকেল ম্যান কর্মহীন হয়ে বসে আছে। বেতন-ভাতা ছাড়াও মজুদ চায়ের জন্যও প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ ব্যাংকঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চায়ের দোকান ও অফিস-আদালত খোলার আগ পর্যন্ত চা খাতের হারানো চাহিদা ফেরানোর সুযোগ নেই। এ কারণে মজুদ চা নিয়ে দেশের শীর্ষ চা বিপণনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো সংকটে পড়ে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষ চা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইস্পাহানি, আবুল খায়ের, মেঘনা গ্রুপ, ইউনিলিভার, পারটেক্স গ্রুপ, এসিআই, এইচআরসি, ওরিয়ন, কনসোল গ্রুপ, সিটি গ্রুপসহ একাধিক বড় শিল্প গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপণন কর্মী হিসেবে সারা দেশে প্রায় ২০ হাজারের বেশি সাইকেল ম্যান নিয়োজিত রয়েছেন। মূলত সাইকেলে করে সড়ক ও রেস্টুরেন্টে চা সরবরাহ করাই তাদের কাজ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাসাবাড়িতে চায়ের চাহিদা থাকলেও তা রেস্তোরাঁ, ফুটপাতের চা স্টল বা অফিস-আদালতের মতো নয়। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে অফিস-আদালত, ফুটপাতের দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ এখন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দেশে চা খাতের বিক্রি তলানিতে এসে ঠেকেছে। স্বাভাবিক সময়ে দেশে প্রতি মাসে ৭০-৮০ লাখ কেজি চা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২০-২৫ লাখ কেজিতে।

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় চা বাগান ও বিপণন কোম্পানি এম আহমেদ টি কোম্পানির (ম্যাগনোলিয়া) জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, রেস্টুরেন্ট, টি স্টল ও অফিস বন্ধ থাকায় চায়ের মূল ক্রেতা নেই। দেশের বাগানগুলোয় চায়ের উৎপাদন হলেও বিক্রি না থাকায় বিপণন কোম্পানিগুলোর কাছে মজুদ চা আটকে রয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক না হলে চা খাতের এ অচলাবস্থা কাটবে না।

বিজ্ঞাপন



এ বিষয়ে জানতে চাইলে চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়। সারা বিশ্বই আজ এ ভাইরাসের কারণে লকডাউনের মধ্যে আছে। খুচরা পর্যায়ে চায়ের বিক্রি কমলেও দেশের অন্যান্য খাতের চেয়ে শঙ্কাহীন রয়েছে। উৎপাদন যথানিয়মে হওয়ায় দেশে চায়ের সংকট হওয়ার সুযোগ নেই। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে অন্যান্য খাতের মতো চা বিপণন ও বাজারজাতের পরিমাণও বেড়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, চা বোর্ড বাগান মালিকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা অনলাইননির্ভর করে দিয়েছে। বাগানেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মেনে উৎপাদন চলছে। চলতি মাসে নিলাম আয়োজনের পরিকল্পনা চলছে। বাসাবাড়িতে চায়ের কদর কিছুটা বাড়লেও পূর্ণাঙ্গ বিপণন শুরু হতে করোনামুক্ত পরিবেশ ছাড়া উপায় নেই।

জানা গেছে, সাধারণ ছুটি বলবৎ থাকা অবস্থায় সীমিত পরিসরে এ নিলাম আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। তবে সামনের কয়েকটি নিলামে চায়ের ক্রেতা সংকট থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

পুরনো মৌসুমের অবিক্রীত চা ও নতুন মৌসুমের জন্য উৎপাদিত চায়ের মজুদ বাড়তে থাকায় এ আংশিক নিলাম সূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। ১৩ ও ১৯ মে নিলাম দুটি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সূচি অনুযায়ী নির্ধারিত গত ২৪ মার্চের ৪৬তম ও ৩১ মার্চের ৪৭তম নিলাম অনুষ্ঠিত হয়নি।

এ অবস্থায় ৪৫ থেকে ৪৭তম নিলামে অবিক্রীত চা আউটলেট পদ্ধতিতে বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছিল চা বোর্ড। সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে নিলাম মৌসুমের কার্যক্রম শেষ হয়। এরপর প্রায় এক থেকে দেড় মাস বিরতি দিয়ে এপ্রিলের শেষ অথবা মে মাসের শুরুতে নতুন মৌসুমের নিলাম কার্যক্রম শুরু করে চা বোর্ড। তবে সংকটময় পরিস্থিতির কারণে এখন পর্যন্ত নতুন নিলাম বর্ষের কোনো সূচি ঘোষণা করতে পারেনি চা বোর্ড।
সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত