সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০১:১৬

প্রতীক হিসেবে চুড়ি, চুলা, চকলেট নিয়ে সমালোচনা চলছেই

বাংলাদেশে আসন্ন পৌর নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের জন্য চুড়ি, ভ্যানিটি ব্যাগ, পুতুল বা গ্যাসের চুলার মত নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কয়েকটি নারী সংগঠন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলেছে, এ ধরণের প্রতীক বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ। খবর বিবিসির।

প্রার্থীদের অনেকেই বলছেন, বিষয়টি নারীর প্রতি যেমন অবমাননাকর, তেমনি নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও এ ধরণের প্রতীক তাদের বিব্রত করবে। তবে, নির্বাচন কমিশন বলছে, সময় স্বল্পতার কারণেই বিষয়টিতে তারা যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারেননি।

৩০শে ডিসেম্বর ২৩৫টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে। এসব পৌরসভায় সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২ হাজার ৬৬৮ জন।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বরাদ্দ রাখা হয়েছে চুড়ি, ভ্যানিটি ব্যাগ, পুতুল, চকলেট, কাঁচি, মৌমাছি, ফ্রক, আঙুর, গ্যাসের চুলা ও হারমোনিয়ামের মত প্রতীক।

অপরদিকে সাধারণ আসনে পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বরাদ্দ রয়েছে উটপাখি, গাজর, ঢেড়স, ডালিম, টিউব লাইট, ব্ল্যাকবোর্ড, স্ক্র ড্রাইভার, ফাইল কেবিনেট, ব্রিজ ইত্যাদি।

দিনাজপুর পৌরসভায় গত কয়েক মেয়াদে সংরক্ষিত আসনে নারী কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মনোয়ারা শানু। এবারের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। বলছেন, নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে যেসব জিনিস বরাদ্দ রয়েছে, তা নিয়ে প্রচারণা চালানোটাও বেশ বিব্রতকর।

“নির্বাচনের প্রথম ব্যাপার প্রতীক। ভোটারদের ওপর এর প্রভাবও আছে। এমন সব প্রতীক রাখা হয়েছে নারীদের জন্য, যা নিয়ে শ্লোগানও ঠিকমত বানানো যায় না। পুতুল মার্কায় ভোট দেন, বলা যায়? চুড়ি মার্কায় ভোট দিন, এগুলো বলা যায়?” প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

খুলনার পাইকগাছার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বিষয়টি নিয়ে তারাও আলোচনা করছেন। একজন ভোটার বলছেন,“ পুরুষদের জন্য কত সুন্দর সুন্দর প্রতীক, উটপাখি, ব্ল্যাকবোর্ড! সবাই বলছে মহিলাদের এগুলো কেমন প্রতীক দিচ্ছে এবার।”

সংরক্ষিত আসনে প্রার্থীদের জন্য এমন প্রতীক বরাদ্দের সমালোচনা করেছে নারী সংগঠনগুলো।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে অত্যন্ত পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি আয়েশা খানম বলেছেন, “আজকে তৈরি পোশাক শিল্প, সামরিক বাহিনী, সরকার পরিচালনা সব ক্ষেত্রেই এখন মহিলারা কাজ করছে। সুতরাং চকলেট, পুতুল, ভ্যানিটি ব্যাগ এসব মার্কা আসলে নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত, নীচ, হীন এবং কুরুচিপূর্ণ। যারা এসব করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।”

এর আগে ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও নারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া প্রতীক নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল নির্বাচন কমিশন।

সে সময় প্রতীক দেওয়ার ব্যাপারে ভবিষ্যতে বিবেচনা করার কথা বলেছিল কমিশন। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের সময় সে অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলছেন, সময় স্বল্পতার জন্য বিষয়টিতে কমিশন মনোযোগ দিতে পারেনি। তবে, কাউকে ছোট করার জন্য এমন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, “এর দ্বারা কাউকে আমরা ছোট করতে চাইনি। যেহেতু এবার সময় ছিলনা, আইনটা হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়ে গেছে, তাই আমরা যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারিনি।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত