সিলেটটুডে ডেস্ক:

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:১১

পুলিশের বিরুদ্ধে বিএনপির মামলার আবেদন খারিজ

নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে শাওন আহমেদ রাজা নিহতের ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান কনককে প্রধান আসামি করে পুলিশের ৪২ সদস্যের নাম উল্লেখ করে আদালতে করা মামলার আবেদন খারিজ করেছেন আদালত।

রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মোল্লার আদালতে দলের পক্ষ থেকে মামলার আবেদনটি করেছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আবেদনের পর তার ওপর শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ শেষে আদেশ দেবেন বলে আদালতে জানান। পরে বিকেলে ২০৩ ধারায় মামলার আবেদনটি খারিজ করে দেন ম্যাজিস্ট্রেট।

মামলায় নাম উল্লেখ ছাড়াও জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

২০৩ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, আদালত যদি বাদীর আবেদনে যুক্তি সঙ্গত কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন, তাহলে সেই প্রেক্ষিতে আবেদন খারিজ করে দিতে পারেন।

জেলা মৎসবজীবী দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধান মামলা খারিজ করে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমানকে ২ নম্বর এবং নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলকে তিন নম্বর আসামি করা হয়েছিল। বাদীর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া মামলায় অন্য যাদের আসামি করা হয়েছিল- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) নাজমুল হাসান, সদর মডেল থানার উপ পরিদর্শক কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তারিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আমীর খসরু, পুলিশ সদস্য শাহরুল আলম, সোহাগ, আরিফ দেওয়ান, ফেরদৌস দেওয়ান, সেলিম, রিপন, যুগল, মামুন, রিয়াজ, হাফিজ, সহকারী উপ পরিদর্শক ইকবাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, পুলিশ সদস্য জাকির হোসেন, নাঈম, রাকিব, আনিস, সাইদুল, এএসআই সোহরাব, পুলিশ সদস্য ইনজামামুল, রাসেল, খলিলুর রহমান, মোহসিন মিয়া, মোস্তাকিম, শাহাদাৎ হোসেন, ফখরুল ইসলাম, আরিফ দেওয়ান, দীপক সাহা, শাহীন, ফরিদ উদ্দিন, মুরাদুজ্জামান, শাহীন, কবির হোসেন, মান্নান, রুবেল, সোহাগসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১০০-১৫০ জন।

মাসুদ আহমেদ তালুকদার শুনানি শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সমগ্র বাংলাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ র‌্যালি করেছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জসহ দেশের কিছু স্থানে বিনা উসকানিতে পুলিশ র‌্যালিতে সরাসরি গুলি করেছে। এতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং যুবদল কর্মী শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এই ঘটনাগুলো আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনে আদালতে মামলার আবেদন করি। মামলায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের ৪২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ডিবি পুলিশের যে এসআই’র গুলিতে শাওন নিহত হয়েছে সেই এসআই মাহফুজুর রহমান কনককে। আর মামলার সর্বশেষ আসামি করা হয়েছে কনস্টেবল সোহাগকে। মামলায় পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে। যাদের সহযোগিতায় এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাদেরও মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী রুহুল কবীর রিজভী সকালে বলেন, যে অন্যায়টি হয়েছে সেটি একটি চরম অন্যায়। সংবিধানে কাটছাট করার পরে এখনও যতটুকু অধিকার আছে সেটা হলো সমাবেশ ও র‌্যালি করার গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই অধিকারটুকুই তারা হরণ করেছে যেটা আমরা বারবার বলি। সেটাই প্রমাণ হয়েছে ১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায়। তারা গণতন্ত্রে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে তার পুরোটাই রাখতে চায় না। একদলীয় সরকারের যে নমুনা সেই নমুনারই চূড়ান্ত বহির্প্রকাশ । আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। নিহত শাওনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ন্যায়বিচারের জন্য আজ আমরা এই মামলার আবেদন করেছি।

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সময় গত বৃহস্পতিবার দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় গুলিতে নিহত হন শাওন।

থানা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় নিহত শাওনের বড় ভাই মিলন হোসেন বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আর পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় সদর মডেল থানার এসআই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে বিএনপির ৭১ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৮০০-৯০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১০ জনকে ঘটনার দিনই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে নিহত শাওনের বড় ভাই মিলন হোসেন ও মেঝ ভাই ফরহাদ হোসেন দাবি করে আসছেন, তারা কোনো মামলা করেননি। শাওনের লাশ হস্তান্তরের জন্য আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলে বেশ কয়েকটি কাগজে মিলনের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তারা জানেন না সেখানে মামলা সংক্রান্ত কোনো কাগজ ছিল কি না। তাদের দাবি নিহত শাওন যুবদলের রাজনীতি করতো। ঘটনার দিন সে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গেই নগরের ডিআইটি এলাকায় ছিল। যেহেতু বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছিলেন সেহেতু বিএনপির কেউ তাকে মারেনি।

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল দাবি করেছেন, নিহতের ভাই-ই মামলা দায়ের করেছেন। এ সংক্রান্ত সিসিটিভির ফুটেজ পুলিশের কাছে সংরক্ষিত আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত