সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ জানুয়ারি, ২০১৬ ২১:১৩

নৃশংসতাকে পাকিস্তানিদের সাথে তুলনা করলেন প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সাথেই কেবল তুলনা করা যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সারা দেশে যে ঘৃণ্য ও পৈশাচিক সন্ত্রাস চালায় তা কোনোদিন বিস্মৃত হওয়ার নয়। তাদের এই নৃশংসতা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সাথেই কেবল তুলনা করা যায়।’

তিনি এ সময় জামায়াত-বিএনপি জোটের সহিংসতায় যারা জীবন দিয়েছেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রলবোমার শিকার হয়ে নিরীহ বাস-ড্রাইভার, বাস-টেম্পো-সিএনজিযাত্রী, প্রিসাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিক্ষক ও শিশু নিহত হয়েছেন। অনেকে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন, জীবনের তরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস-বোমাবাজি উপেক্ষা করে সেদিন আপনারা গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না। মানুষ শান্তিতে থাকবে, হাসিমুখে জীবনযাপন করবে, তা ওদের সহ্য হয় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বিশ্বে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোলমডেল, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা যখন বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ডিজিটালাইজেশন, এমডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জন, জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও পুরস্কারে ভূষিত করছে, তখনই ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত আবারও দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা শুরু করে।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপিনেত্রী আদালত হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে সারা দেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পেট্রল-বোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং এক হাজার ১৮০ জন আহত হয়। দুই হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি ও আটটি লঞ্চে আগুন দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ছয়টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। জনগণকে ভোগান্তিতে রেখে, অমানবিক কষ্ট দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করে বিএনপিনেত্রী নাটক করে ৬৮ জনকে নিয়ে আরাম-আয়েশে ৯২ দিন অফিসে থাকেন। হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডবের হুকুম দেন। তার এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জনসমর্থন পায়নি। ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে নাকে খত দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।’

বিএনপি-জামায়াতের অনৈতিক অবরোধ কর্মসূচির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অগ্নি-সন্ত্রাসীদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিচারকাজ চলছে। যারা আপনাদের আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে, জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে সেই অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের মিডিয়া এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সরকারের সমালোচনা করতে পারছে।

“২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ছিল বাক-স্বাধীনতা হরণের দেশ, সাংবাদিক নির্যাতনের দেশ”।

সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেসরকারি ৩২টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদনের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাসহ তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

দুর্নীতি দমনে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত