সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:১৪

জঙ্গিবাদও প্রতিবাদ, তবে এ ধারাটি অবিবেচনাপ্রসূত : জাফরুল্লাহ

জঙ্গিবাদকে ‘এক ধরনের প্রতিবাদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এ প্রতিবাদের ধারাটি গ্রহণযোগ্য নয়, অবিবেচনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

পুলিশের অত্যাচারের কারণেই জঙ্গিবাদের মাধ্যমে এ প্রতিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।  

শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ।

‘সন্ত্রাস প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জঙ্গিবাদও একটি প্রতিবাদ। তবে এই প্রতিবাদের ধারাটি গ্রহণযোগ্য নয়, অবিবেচনা প্রসূত। এটাকে আমরা মেনে নিতে পারি না। এটি ভুল পদ্ধতি, পদ্ধতিগত ভুল। কিন্তু এটাও একটি প্রতিবাদ। আর এই প্রতিবাদের জন্ম হয়েছে পুলিশের অত্যাচার থেকে।’

এর আগেও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত মন্তব্য এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করে শাস্তি পাওয়া জাফরুল্লাহ দাবি করে বলেন, ‘আমাদের পুলিশ তো এই ধরনের ছিল না। আমাদের দেশে দারোগা-পুলিশ আছে বহু বছর ধরে। তারা এটা-সেটাতে দু-চারটি টাকা ঘুষ-ঠুষ যে খেতো না, তা নয়। কিন্তু এ দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে কখনো অভিযোগ ছিল না যে, নিরপরাধ-নিরীহ লোককে ঠেকিয়ে (ধরে নিয়ে) পয়সা খেয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘এখন কী হচ্ছে, কোনো মামলায় তারা (পুলিশ) অজ্ঞাত পাঁচশজনের নাম দিয়ে দেয়। তারপর সুবিধামতো ডেকে এনে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ করে টাকা নেয়। ডেকে আনার কারণ জানতে চাইলে বলেন, উপরের নির্দেশ আছে। তবে সত্যিই উপরের নির্দেশ আছে কি না, সেটা আমরা জানি না। পুলিশের বড় কর্মকর্তারাই তা বলতে পারবেন।’

‘টাকা না দিলে পুলিশ এখন মামলার ভয় দেখায়। ধরে এনে বলেন, কোন মামলা দেব? অস্ত্র মামলা দেব, না বোমা ফেলার মামলা দেব? এভাবে তারা ধরে এনে মামলার ভয় দেখায়।’ বললেন জাফরুল্লাহ।

ডিএমপি কমিশনারের সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আছাদুজ্জামান মিয়াদের মতো লোকেরা হুকুম দিয়ে বলেন- ১০ জন করে ধরো। ১০ জন করে ধরতে হলে ওসি সাহেব কোথা থেকে তাদের আবিষ্কার করবেন?’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি বলেন, ‘আজকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে (ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন) ১৫০ জন লোককে মেরেছে। এতবড় ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা কোনো আলাপ-আলোচনা করতে রাজি নই। ইউনিয়ন পর্যায়ে যার বাবাটা মারা গেছে, তার ছেলেটা জঙ্গিই হবে। তার কোনো প্রতিকারের পথ নেই। সে প্রতিকার খুঁজে বেড়ায় ক্ষোভের মাধ্যমে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভয়ানক বিপদ আছে। কারণ, আমার শত্রু আমার গায়ের ওপর বসে আছে। এতো বড় ঘটনা ঘটলো (গুলশানের সন্ত্রাসী হামলা), ‘র’ (ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা) এখানে (বাংলাদেশে) না থাকলেও তাদের অন্তত ২০টির মতো অফিস আছে। অজানা অফিস কত আছে, খোদাই (আল্লাহ) জানেন। এতসব জানার পরেও কেন তারা কিছু করতে পারে নাই।’

দেশের দুর্যোগের মুহূর্তে ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে এক কাতারে আনতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন- ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাব সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত