জাকির আজিজ

০৩ আগস্ট, ২০১৬ ০১:৪৪

জামায়াত প্রশ্নে ‘কোণঠাসা’ এমাজউদ্দীন

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অংশীদার, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ২০ দলীয় জোটে আর রাখতে চান না, এমন মন্তব্যের পর বিএনপির মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন দলটির থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে এমাজউদ্দীন বলেছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২০ দলের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ওইভাবে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। সুতরাং এই দিক থেকে দেখলে বলতে হবে, জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। যুদ্ধাপরাধী ওই দলটির ব্যাপারে তিনি কোনো দায়দায়িত্ব বহন করবেন না বলেও উল্লেখ করেন এমাজউদ্দীন।

দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

ড. এমাজউদ্দীন সে সময় বলেছিলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, সেটা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন সঙ্কটের মতো মনে হয়। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সঙ্কটের সমাধান করতে হবে।

ড. এমাজউদ্দীনের এ বক্তব্যের পর বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ড. এমাজউদ্দীন সাহেব বিএনপির একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি দলের কেউ নন। ওই কথাটা তিনি বলেছেন। সুতরাং তাকেই জিজ্ঞাসা করুন। এ ব্যাপারে তিনিই বলতে পারবেন।’
 
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই রকম কোনো সিদ্ধান্ত বেগম খালেদা জিয়া নিয়েছেন বলে আমি অন্তত জানি না। এমাজউদ্দীন সাহেব বলে থাকলে উনি হয়তো জানেন, তার সঙ্গে কথা বলুন।’
 
এদিকে, ওই মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া ২০ দলের শরীক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘২০ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামী ছিল, এখনো আছে।’

বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের পথে জামায়াতে ইসলামীকে সব সময় বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে প্রসঙ্গে  এই বুদ্ধিজীবী বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি রাজনৈতিক দল বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হয়। কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দল ওই দলটিকে নিষিদ্ধ করতে পারে। বর্তমানে দেশের বিরোধী দল, রাজনৈতিকভাবে না হলেও দেশের বিরোধী দল বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ২০ দলের মধ্যে অন্ততপক্ষে এই দলটিকে আর ওইভাবে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বুঝতে পেরেছেন, ওই দলটিকে রাখলে যে লায়াবিলিটি আসে সেটা তিনি বহন করতে চান না। সুতরাং এই দিক থেকে দেখলে প্রতিবন্ধকতা (জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে) নেই।

তিনি আরো বলেন, ‘অন্যদিক থেকে বলবো, জামায়াতে বর্তমানে যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের অধিকাংশের জন্ম একাত্তর সালের পরে। এরাও দেশ ও জাতির অংশ। সুতরাং তাদেরও একটা চিন্তা-ভাবনা থাকা দরকার। জাতীয় ঐক্য যদি তাদের কারণে ব্যর্থ হয়, সেটা তারাই বা চাইবেন কেন? সুতরাং এটা নিয়ে ঝগড়া-ঝাটির কোনো কারণ আছে বলে আমরা মনে করি না।’

উল্লেখ্য, গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পর বেগম খালেদা জিয়ার ‘সন্ত্রাস বিরোধী জাতীয় ঐক্য’র আহ্বানে সরকারের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় বিএনপি এখন সন্ত্রাস বিরোধী ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনের পথে এগুচ্ছে। ২০ দলীয় জোট এবং ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অবস্থানরত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও প্রগতিশীল দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা প্লাটফর্ম গঠন করতে চায় বিএনপি। তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয় কনভেনশনে ২০ দলকে রেখে শুধু জামায়াতকেও বাদ দেয়া হতে পারে।
 
জানা যায়, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনে ওই দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ এবং বিএনপির রাজনীতির পরামর্শক ও সমালোচক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ করছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত