সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:১১

পদবঞ্চিতদের এখনই সুসংবাদ নেই, অপেক্ষার পরামর্শ ফখরুলের

বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পর বিভিন্ন মহলে সমালোচনা, কয়েকজন নেতা প্রকাশ্য বিরোধিতা ও পদত্যাগের ঘটনা ঘটলেও পদবঞ্চিতদের আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, 'যোগ্যদের মধ্যে যারা কমিটিতে স্থান পাননি তাদের জন্য এখনই কোনো সুসংবাদ নেই। যেহেতু কমিটি দেওয়া হয়ে গেছে। তাই ক্ষোভ-বিক্ষোভ না করে তাদেরকে ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে।'

সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর এসব কথা বলেন।

গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল। সে সময় তিনি বলেছিলেন, 'বিএনপির একটি ভাইব্রেন্ট ও ডায়নামিক কমিটি হয়েছে। এই কমিটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উপযোগী ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।'

কিন্তু কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ নিয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। কমিটি ঘোষণার দুই দিন পর সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনের কার্যালয়ে যান বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল কার্যালয়ে যাওয়ার পর দলের অনেক নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হন।

এ সময় ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ নেতারা মহাসচিবকে স্বাগত জানান। এরপর নতুন নেতারা মহাসচিবের সঙ্গে তার কক্ষে কুশল বিনিময় করেন।

কমিটি ঘোষণার পরের দিন রোববার কার্যালয় ফাঁকা থাকলেও সোমবার নেতাকর্মীদের ভিড়ে সরব হয়ে উঠে। নতুন কমিটির তৃণমূল স্তরের নেতারা কর্মীদের সাথে কোলাকুলি করেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া নতুন নেতাদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান অনেকই।

তবে এসএম জিলানিসহ কয়েকজন নেতা নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নতুন কমিটি গঠনের পেছনে দলের দুই ব্যক্তি (চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব) জড়িত বলে একটা প্রচারণা রয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এটা অপপ্রচার-প্রচারণা। একটি গোষ্ঠী ও একটি মহল প্রথম থেকেই বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, '১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে ক্ষমতা দিয়েছেন কাউন্সিলরা। দলের চেয়ারপারসন বিচার-বিশ্লেষণ করে বিএনপির জাতীয় পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি দিয়েছেন। কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তারা আগামী তিন বছর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম সুচারুরূপে পালন করবেন। কমিটিতে অনেক যোগ্য বঞ্চিত হয়েছেন। যোগ্য নেতাদের অভাব নেই। তাই সব যোগ্যদের কমিটিতে আনা সম্ভব হয়নি।'

কমিটি দেয়ার পর গত দু'দিনে নেতাকর্মীরা জেগে উঠেছে কি-না,এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সেটা আপনারা যেভাবে দেখেন সেভাবে না। আপনারা যেভাবে জেগে উঠতে দেখেন, সেভাবে না। কনসোলেটেড করতে হয়, তখনই জেগে উঠে। পুরো ব্যাপারটা সামগ্রিক অবস্থার ওপর, পারিপার্শ্বিকতার ওপর, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে কি-না, তার ওপর নির্ভর করে। দেশে গণতন্ত্র নেই, সেই দেশে জেগে উঠাটা সহজে হয় না।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'সাংবাদিকরা ইদানিংকালে বিএনপির ভুলত্রুটি খুঁজছে। কিন্তু সরকারি দলের তেমন একটা ভুলত্রুটি খুঁজছেন না, তাদের ভুলত্রুটি থাকলেও সেগুলোকে সেভাবে তুলে ধরছেন না।'

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'আমরা অতীতেও এ সমস্ত অবস্থা ফেইস করেছি।' মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের বিশ্বাস আছে, আমাদের আস্থা আছে, এই কার্যকরী কমিটির মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বসম্মতিক্রমে সবগুলো ওভারকাম করতে পারবেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। আমরা তা করতে পারব।'

পদবঞ্চিতদের বিষয়টি নিয়ে ভাবা হবে কি-না এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'কমিটি ঘোষণা হয়ে গেছে। বঞ্চিতদের কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।' তবে বঞ্চিতদের মধ্যে যারা যোগ্য তাদেরকে বিভিন্ন উপ-কমিটিতে যুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

বিএনপির কমিটি বছরের একটা সেরা তামাশা-যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এ মন্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত একটা উক্তি করেছেন; এটা রাজনৈতিক ভাষা নয়।'

এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করীম শাহিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য জামাল শরীফ হীরু, সাইফুল ইসলাম পটু, কাজী রফিক প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত