নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৪:৫৮

গোলাম আজমের সমাবেশ পণ্ড করে দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন লিটন

২০১৫ সালের ২ অক্টোবর নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্রের গুলিতে স্কুলছাত্র শাহাদাত হোসেন সৌরভের গুলিবিদ্ধ হওয়ার সমালোচিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন রাজনৈতিকভাবে আলোচনায় আসেন নব্বই দশকের শেষভাগে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের সমাবেশ পণ্ড করার মাধ্যমে।

১৯৯৮ সালে জামায়াত অধ্যুষিত সুন্দরগঞ্জে জামায়াতের তৎকালীন আমিরের সমাবেশ পণ্ড করে দেন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন।

এরপর রাজনৈতিকভাবে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে। নিজেকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান তিনি। গোলাম আজমের সমাবেশ পণ্ড করার সময় লিটন দলীয় কোন পদে ছিলেন না।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। কিন্তু জামায়াত অধ্যুষিত সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল কোনঠাসা। দলের সমর্থক থাকলেও কোন পদে ছিলেন না মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন।

১৯৯৮ সালে হাতে গোনা কয়েক তরুণকে নিয়ে জামায়াতের তৎকালীন আমীর গোলাম আযমের সুন্দরগঞ্জের সমাবেশ পণ্ড করে হৈ চৈ ফেলে দেন। এলাকার লোকজন জানায় সেই থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় লিটন। তার নানা কর্মকান্ডের জন্য এলাকার লোকজন তাকে হুজুগে বলেও জানতো।

২০০১ সালের কাউন্সিলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন লিটন। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য হিসেবে।

সংসদ সদস্য লিটনের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্র সৌরভকে গুলি করে আহত করার অভিযোগ উঠলে কেবল গাইবান্ধা নয় সারা দেশেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ও কারাবাসও করতে হয় তাকে। তবে সংসদ সদস্য হয়েও এলাকায় খুবই সাধারণ জীবনযাপন ও চলাফেরার কারণে লিটন ছিলেন স্থানীয় রাজনীতিতে জনপ্রিয় এক নাম।

সাংসদ লিটন কর্তৃক স্কুলছাত্র সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর উচ্চ আদালত থেকেও প্রথমে জামিন পান নি তিনি। এরপর কিছুদিন জেলহাজতে থাকার পর আদালতের মাধ্যমে জামিন পান তিনি।

জামিন পেয়ে স্কুলছাত্র সৌরভের পরিবারের সাথে মৌখিক সমঝোতা করেছেন বলে জানা গেছে। ফেরি করে হাড়ি-পাতিল বিক্রি করা সৌরভের বাবা সাজু মিয়া জানিয়েছেন, সৌরভকে গুলির মামলা নিয়ে কিছুদিন আগে এমপি লিটনের সঙ্গে তাদের ‘মৌখিক সমঝোতা’ হয়েছিল। লিটন ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয়ে সৌরভের পরবর্তী ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতার কথা দিয়েছিলেন। সৌরভকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আগামী ৫ জানুয়ারি সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল।

এদিকে, সাংসদ লিটনের গুলিতে আহত হওয়া স্কুলছাত্র সৌরভ প্রাথমিক শেষ করে এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠেছে। সাংসদ লিটনের হত্যাকাণ্ডের পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে সৌরভ বলেছে, “খুব খারাপ লাগতিছে। আমাকে গুলি করছিল বলে এমপি সাহেবের শাস্তি চাইছিলাম। তার মৃত্যু চাই নাই।” এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সৌরভের বাবা সাজু মিয়া।

সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডের পেছনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রোববার দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলন করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়, এটা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাপুরুষোচিত কাজ।

গাইবান্ধার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যার ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফখরুল বলেছেন, এ ঘটনাই প্রমাণ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ।

উল্লেখ্য, শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহবাজ গ্রামে নিজের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত