সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ জুলাই, ২০১৭ ২৩:৪৯

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আদালতের রায় নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতি, আদালতের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। তারা প্রধান বিচারপতি, রায় ও অ্যামিকাস কিউরিদের নিয়েও কথা বলেন।

রোববার (৯ জুলাই) সংসদ সদস্যদের এমন আলোচনার সময়ে অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। আলোচনার মাঝপথে অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত হন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আলোচনার সূত্রপাত করেন জাসদ একাংশের নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল। আলোচনায় অংশ নেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

মঈনউদ্দিন খান বাদল
জাসদ একাংশের নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কি স্বয়ম্ভু ভগবান যে আপনি নিজেই নিজের বিচার করবেন। আপনি কি আল্লাহ হয়ে গেছেন, যে বলিলাম আর হয়ে গেল? সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের রায় নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বাদল এসব মন্তব্য করেন।

বাদল বলেন, ‘বিচারক যদি এমন কাজ করে, তাতে তার বিচারক থাকা চলে না। অবিবেচনাপ্রসূত কাজ করে, অপরাধ করে তাহলে তার সাজাটা কীভাবে হবে? এখানে সব বিচারকের সাজার প্রশ্ন আসেনি। যিনি অপরাধ করেছেন তার সাজার বিষয় এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বলতে চাই। ন্যাচারাল জাস্টিস বলে একটা কথা আছে। সেই ন্যাচারাল জাস্টিসের ব্যাপারে বক্তব্য হলো- আপনি আপনার বিচার করতে পারেন না। আপনি কি স্বয়ম্ভু ভগবান যে আপনি নিজেই নিজের বিচার করবেন। আপনি কি আল্লাহ হয়ে গেছেন, যে বলিলাম আর হয়ে গেল?’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ইমপিচমেন্ট (অপসারণ) হয় এখানে (সংসদে)। প্রধানমন্ত্রীর ইমপিচমেন্ট হয় এখানে। স্পিকারের ইমপিচমেন্ট হয় এখানে। আর আপনি (প্রধান বিচারপতি) বলছেন আমার বিচার আমি করব।’

বাদল বলেন, ‘সংসদের কোনো আইন যদি বেসিক স্ট্রাকচার ক্ষতিগ্রস্ত করে সেটা আদালত দেখতে পারেন। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বেসিক স্ট্রাকচারের কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। ৯৬ অনুচ্ছেদ আমরা প্রতিস্থাপন করেছিলাম। এটা বেসিক স্ট্রাকচারের কোথায় আঘাত করেছে আমরা দেখতে চাই।’

শেখ ফজলুল করিম সেলিম
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের রায় নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম সংশ্লিষ্ট বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, নিজেরাই আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ রায় দিয়েছেন।

সেলিম বলেন, প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন জনগণের প্রতিনিধিরা। আমরা যারা সংসদ সদস্য, তারা জনগণের পক্ষেই এসব কার্যক্রম করব।

তিনি আরও বলেন, ‘৯৬ কোনো অসাংবিধানিক আইন না। তাই এটা যারা করেছেন তারা নিজেরাই সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ রায় দিয়েছেন।’

ওই বেঞ্চের অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে সেলিম বলেন, ‘কোথাকার ডক্টর আমরা জানি না। উনি কি মুরগির ডাক্তার নাকি ছাগলের ডাক্তার না ভেড়ার ডাক্তার, না এমনি ডাক্তার। এই ডাক্তার সে প্রেসক্রিপশন একটা দিয়ে দিছে যে সংসদ পারবে না, সুপ্রিম জুডিশিয়াল করবে। আপনি কানে হাত দিয়ে উঠেন বসেন। আপনি ৭২ এর সংবিধান প্রণেতা এটা বলতে পারেন না।’

ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এরা কত বড় সুবিধাভোগী লোক। এখন একটু মুচড়া পাঠাইয়ে সংবিধান সংসদের সঙ্গে একটা কনফ্লিক্ট লাগায়ে যদি কোনো রেজাল্ট পাওয়া যায়। এই হলো তাদের পরিকল্পনা।’

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু কতটুকু স্বাধীন। সংসদের চেয়েও স্বাধীন? তা হতে পারে না। আপনার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে বলেছেন, এটা সংবিধানবিরোধী। এটা আপনাদের প্রমাণ করতে হবে।

সেলিম বলেন, ‘সংসদের হাতে ক্ষমতা থাকবে। আপনি রায় দিয়েছেন, রায় নিয়ে বসে থাকেন। এই সংসদ যদি ওটাকে কার্যকর না করে তাহলে ওটা কোনো দিন কার্যকর হবে না।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ৮ জন বিচারপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে বিব্রতবোধ করেছেন। আপনাদের সবার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট করা দরকার ছিল।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এটা ভেবে দেখা দরকার।

তিনি বলেন, আমি এখানে কাউকে ছোট করতে চাইছি না। কিন্তু স্বাধীনতার মূল চার স্তম্ভের প্রতি আমাদের সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

প্রধান বিচারপতির নাম উল্লেখ না করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করবেন আবার তার মধ্য থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল রেখে দেবেন তা হয় না। এ সময় তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দেন।

ইনু বলেন, বাংলাদেশে আর অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসার কোন উপায় নেই। তাই পাকিস্তানের সংবিধানের সঙ্গে আমাদের সংবিধানকে মেলালে চলবে না। রাষ্ট্রের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের প্রতি সবারই শ্রদ্ধা ও আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিরা ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান সাংসদ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে এ সম্বন্ধে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি এ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু প্রশ্ন হলো সার্বভৌমত্ব নিয়ে। যারা অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে বক্তব্য রেখেছেন তাদের বক্তব্য আমার কাছে আছে। তারা অসত্য কথা বলেছেন। ভুল তথ্য জাতিকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যেমন ড. কামাল হোসেনকে যখন সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করে তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আমরা ভারতকে অনুসরণ করেছিলাম। এখন ভারতে এটা নেই। তার মতো একজন লোক এ অসত্য বলতে পারেন? ভারতের সংবিধানের ১২৪ তম অনুচ্ছেদে পার্লামেন্ট উভয় পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমর্থনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমিরুল ইসলাম বললেন কোথাও নেই। তিনি অত্যন্ত আপত্তিকর কথা বলেছেন। আমার খুব দুঃখ লাগে, এরা সংবিধান নিয়ে কথা বলেন, সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। আজকে আমার বলতে দ্বিধা লাগে, তারা সুবিধাবাদী। ৭২ (১৯৭২) এর সংবিধানে করলেন একরকম আর এখন সেটার উল্টো বলতে গিয়ে নানা কথা বললেন। সেই কথাগুলো আমি উল্লেখ করতে চাই না।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র ব্যতিক্রম হলো পাকিস্তান। এটা করেছে আইয়ুব খান। যার বিরুদ্ধে আমরা ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান করে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিলাম। সেই আইয়ুব খানের পদ্ধতি আমাদের দেশের এই অ্যামিকাস কিউরিদের পছন্দ। এটা করতে গিয়ে তারা অসত্য কথা বলেছেন।’

হাইকোর্টের জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের জজদের কখনো অসম্মান করতে চাই না-এমন মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু মন্তব্য? লেখাপড়া জানে না, আরও এমনভাবে কতগুলো শব্দ আমিও সেটি উচ্চারণ করে পিছের দিকে আনতে চাই না। এই সংসদের সদস্য স্পিকার আজকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তিনি সিপিইউ সভাপতি হয়েছেন। এই সংসদের আরেকজন সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী অনেক বড় বড় দেশ তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, অনেক দেশের মনোনীত প্রার্থীদের হারিয়ে তিনি আইপিইউ’র সভাপতি হয়েছেন। সেই সংসদ নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা?’

সংবিধানের আর্টিকেল ৭০ দেখিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও দাবি তোফায়েল বলেন, ‘তারা নিজেদের নামের আগে বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, সংবিধান প্রণেতা বলেন। আর্টিকেল ৭০ নিয়ে কথা বলেছেন। আর্টিকেল ৭০ দেখিয়ে, সমস্ত ভুল তথ্য। আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং ব্যথিত। সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। সেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত এই সংসদ। আমাদের ক্যাবিনেট সংসদের কাছে রেস্পন্সিবল।’

তোফায়েল আরও বলেন, ‘যারা অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ওখানে বক্তৃতা করেছেন, আমি বলব সবই অসত্য। সত্যতার লেশমাত্র নেই। ওখানে অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানের বক্তব্য দিয়েছেন তারা। আমি ভাবি এরাতো সামাজিক মানুষ, এরা মুখ দেখাবে কীভাবে। পৃথিবীর সব সভ্য দেশে এখনো পার্লামেন্ট সার্বভৌম এবং তারাই বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা রাখেন।’

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দ্বারা গুরুতর অসদাচরণের কথাই আমাকে বলতে হয়। শুধু কয়েক মাস আগে প্রধান বিচারপতি সিনহার আদেশে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অবৈধভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত না করার জন্য বলেছেন। হাস্যকর কারণের ওপরে নির্ভর করে তিনি বলেছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দায়িত্ব পালনকালে অনেক কষ্ট করে মৃত্যুদণ্ডসহ অনেক বিচারের ব্যবস্থা করেছেন, রায় দিয়েছেন। তদন্ত যদি তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়, সে বিচারের বিষয়ও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এটি করার মাধ্যমে বিচারপতি সিনহা ন্যায়বিচারের প্রতিবন্ধকতা বা বাধা হিসেবে পরিচিত অপরাধ করেছেন, যা দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের নাম শুধু ব্যবহার করেননি, তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্যাড ব্যবহার করেছেন। যদিও এটা ছিল তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’

মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কাছাকাছি পাকিস্তানে আছে। যে পাকিস্তানকে বাংলাদেশ গোরস্থানে পাঠিয়েছে, সে পাকিস্তান হলো প্রধান বিচারপতির আদর্শ। জনগণ কৈফিয়ত নেবেই নেবে। কেউ বিচারের ঊর্ধ্বে না।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন
রাশেদ খান মেনন সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই রায়ের পেছনে জাতীয় সংসদকে তাদের ইচ্ছার অধীনে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য রয়েছে। কোনো বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, তা বিবেচনায় আনতে হবে।

তিনি ড. কামাল হোসেন ও আমীর-উল ইসলামের সমালোচনা করে বলেন, কেন তারা আজকে এই অবস্থান নিলেন? তারা সময়-সময় রং বদলান। এবারও রং বদলিয়েছেন। ১/১১-এর সময় কামাল হোসেন সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন। তথাকথিত মাইনাস টু ফর্মুলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

আলী আশরাফ
আওয়ামী লীগের সাংসদ আলী আশরাফ বলেন, দেশটাকে সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই রায় পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বিশিষ্ট দুই আইনজীবীর সমালোচনা করে বলেন, অসাংবিধানিক সরকারব্যবস্থার জন্য পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন। সুশীল সমাজের নামধারীরা, অ্যামিকাস কিউরি নামে কিসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা কিসের লক্ষণ?

জিয়াউদ্দিন বাবলু
জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ড. কামাল হোসেন ও আমীর-উল ইসলাম রং ও ভোল পাল্টেছেন। ১/১১-এর সময় অবৈধ সরকারের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।

রুস্তম আলী ফরাজী
স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা সরকারি চাকরিজীবী। প্রধান বিচারপতি ভুল করলে তার বিচার করবে কে? এটা অন্যায় রায়।

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে গত ৩ জুলাই আপিল বিভাগের রায় দিয়েছেন। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা হারিয়েছে সংসদ। বর্তমান সরকার ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রতিস্থাপিত করেছিল। ওই সংবিধানের ৯৬ ধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারত সংসদ।

সোমবার (৩ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর ছয় সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ বলেন, এর ফলে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ হয়েছে। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে না। আগের মতোই জুডিশিয়ালেই বিষয়টি দেখা হবে।

গত বছরের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা রায় দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র। রায়ে আরও বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে। আদালত রায়ে আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সংসদ সদস্যদের সবসময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারেন না। যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সাংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

সংবিধানে এই সংশোধনী বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন আদালত। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে মামলার ৫ মে রায় দেন হাই কোর্ট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত