সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ আগস্ট, ২০১৭ ০২:৫৯

‘তখন উচ্চ আদালতের বিবেক কোথায় ছিল’

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সে সময়কার বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী ও আদালতের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'এখন তো অনেক বিষয়ে রিট হয়। অনেক সুয়োমোটোও জারি হয়। সেদিন যখন আইন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তখন উচ্চ আদালতের বিবেক কোথায় ছিল? তাদের বিবেক কি বন্দি ছিল? এত জ্ঞানী-গুণী, বিবেকবান আইনজীবী ছিলেন, সেদিন তো হাতে গোনা কিছু সংখ্যক মানুষ ছাড়া কেউই এর প্রতিবাদও করেননি!'

দেশে চলমান উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, 'বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিতে চায়। ইনশাল্লাহ, এদেশ জাতির পিতার আদর্শের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।'

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন, আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদানের বেলায় জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়াকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২১টি বছর, যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারাই খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে তাদের পুনর্বাসন করেছেন, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী বানিয়েছেন। জেনারেল এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল গঠন করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ-হুদাকে সংসদ সদস্য করে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের হাতে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন।'

বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে আবারও দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বেইমান খুনি মোশতাক কিছুদিন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। খুনি মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। এতে স্পষ্ট প্রমাণ হয়, জিয়াউর রহমান খুনি মোশতাকের ডান হাত ছিলেন। যেটা বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুকও পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ক্ষমতাকে নিজেদের ভোগের জন্য প্রয়োগ করেছিলেন। দেশের মানুষের সম্পদ লুটে অর্থ কামাই করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। আর এ দেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। পঁচাত্তরের পর অপপ্রচারের পর অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মানুষকে নিয়েও অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তার নামও নিতে দেওয়া হয়নি। রেডিও-টেলিভিশনে তার নাম ও ছবি প্রচারও নিষিদ্ধ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে শহীদদের রক্তের অবমাননা করেছিলেন তারা।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের ধানমণ্ডির বাড়িতে বিপুল সম্পদ পাওয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু আজ বাংলার মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়েছে, কারা দুর্নীতিবাজ, কারা লুণ্ঠনকারী! যে জিয়াউর রহমানের পরনের কাপড়ও আসত বিদেশ থেকে, তাকে নিয়েও বলা হয়, ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙা সুটকেস ছাড়া না-কি তিনি কিছুই রেখে যেতে পারেননি। আজ খালেদা জিয়ার ছেলের ঘুষ, দুর্নীতি আর মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ বিদেশের আদালতে স্পষ্ট হয়েছে।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস-দুর্নীতি, লুটপাট ও বাংলাভাই সৃষ্টি এবং বাংলাদেশকে তার মূল আদর্শ থেকে সরিয়ে নেওয়া— পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছেন, এসব অপকর্মই তারা করেছেন। কারণ তারা দেশের স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করেন না।'

এ প্রসঙ্গে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সন্ত্রাস-দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনের অভিযোগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার বিচারের রায় হয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলের সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে। আরেক ছেলের পাচার করা টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা হয়েছে। আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মামলা চলছে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন। দুর্নীতি না করলে এই কালো টাকা আসে কীভাবে?'

নির্বাচন বানচালের আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'নির্বাচনে তিনি (খালেদা জিয়া) যাননি, সেটি তো তার সিদ্ধান্ত। আমি তো তাকে ফোন করে বলেছিলাম, আসুন সবাই মিলে সরকার গঠন করি। যে যে মন্ত্রণালয় চান, দেওয়া হবে। তবু নির্বাচনটা হোক। তিনি তো নির্বাচনে না এসে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও আর মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। একটা দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করতে সবচেয়ে নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডই তারা ঘটিয়েছে। পরে দেশের মানুষই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। নির্বাচনও হয়েছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'এটাই তাদের রাজনীতি! এটাই তাদের কাজ! তারা মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। কেবল মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে। নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। আবার এখনও যতই নির্বাচন এগিয়ে আসছে, ততই তাদের নানা অজুহাত।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আজ জাতির পিতা বেঁচে না থাকলেও তার আদর্শ আমাদের মধ্যে রয়েছে। শোক দিবসে এটাই হোক আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, এ দেশকে আমরা জাতির পিতার আদর্শে তার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। তাহলেই জাতির পিতার আত্মা শান্তি পাবে।'

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শাজাহান খান, সাদেক খান, শাহে আলম মুরাদ, এসএম মান্নান কচি, কামাল চৌধুরী, হুমায়ুন কবির, শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ। পরিচালনা করেন আখতার হোসেন ও আজিজুল হক রানা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত