সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ১১:৩৪

‘আন্দোলনে’ বিএনপির পাশে নেই জামায়াত

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া বিএনপির পাশে নেই দলটির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামি। যুদ্ধাপরাধের বিচারে দলের শীর্ষ নেতাদের জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে কোণঠাসা জামায়াত গত সাত বছর ধরে ধরপাকড়ের মুখে রয়েছে। বিএনপির আন্দোলনে যোগ দিয়ে নিজের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও প্রতিকূল করতে আগ্রহী নয় দলটি।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মামলার রায় হবে। রায় ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। খালেদা জিয়াকে 'মিথ্যা মামলায়' সাজা দেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়ে রেখেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগও হুঁশিয়ার করেছে, নাশকতা হলে প্রতিরোধ করা হবে।

গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার পথে বিএনপির মিছিল থেকে হামলা হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ। এ হামলার মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বহু নেতাকর্মী আসামি হয়ে কারাগারে গেছেন।

রাজনীতি দৃশ্যত ফের সংঘাতময় হয়ে উঠছে; এতে জামায়াতের ভূমিকা কী হবে? এ প্রশ্নে ছাত্রশিবিরের সাবেক এক সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা হলে জামায়াত প্রতিবাদ করবে। তবে সরাসরি আন্দোলনে জড়াবে না।

গত রোববার জোটের বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জামায়াত। দলটি সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে কি-না- এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াত জোটে আছে, থাকবে। শুধু খালেদা জিয়া নন, বিএনপির যে কোনো নেতাকর্মী দণ্ডিত হলে প্রতিবাদ করবে। তবে নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলে নয়। খবর দৈনিক সমকালের।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের পর জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ড হয়। রায় ও নেতাদের দণ্ড কার্যকরের পর জামায়াতের হরতালেও সমর্থন ছিল না বিএনপির। একে জামায়াতের দলীয় ইস্যু বলে এড়িয়ে যায় বিএনপি। খালেদা জিয়ার মামলার রায়কেও বিএনপির দলীয় হিসেবে ইস্যু হিসেবে দেখছে জামায়াত। জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির আন্দোলনকে জোটের ইস্যু মনে করে না জামায়াত। জামায়াত মনে করে, সংসদ নির্বাচন এখনও অনিশ্চিত। তাই এত আগেভাগে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার পক্ষপাতী নয় জামায়াত।

গত অক্টোবরে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ আট কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হন। তারা এখনও কারাগারে। শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতালে বিএনপি শেষ মুহূর্তে সমর্থন দিলেও, সেই হরতাল ছিল একেবারেই ঢিলেঢালা।

এ ব্যাপারে জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেছেন, 'গণতান্ত্রিক উপায়ে যতখানি সম্ভব ততটা প্রতিবাদ করেছে জামায়াত। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেও সরকার বাধা দিয়েছে।' বিএনপির আন্দোলনে জামায়াতের ভূমিকা কী হবে, সে সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, অতীতে বিএনপির সমর্থন না পাওয়ার কারণে তারা দূরে থাকছেন বিষয়টি তা নয়। আসলে তাদের প্রধান ভাবনা নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা। তারা জানান, সরকারের 'দমনপীড়নের' কারণে তারা দলীয় কর্মসূচিই পালন করতে পারছেন না। যেখানে নামার চেষ্টা করছেন, সেখানেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। দলীয় কার্যালয়ে সভা পর্যন্ত করতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির সমর্থনে রাজপথের আন্দোলন নামলে জামায়াতের বিরুদ্ধে ধরপাকড় জোরালো হবে। নেতাকর্মীরা আবারও ঝুঁকিতে পড়বেন। জোট মিত্রের জন্য এ পরিস্থিতিতে পড়তে নারাজ জামায়াত।

জামায়াত নেতারা বলছেন, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে আন্দোলনে বিএনপিকে 'সর্বাত্মক সমর্থন' দিয়ে রাজপথে ছিল তাদের নেতাকর্মীরা। দলীয় হিসাবে ৩ লাখ ৬০ হাজার নেতাকর্মী সেই সময়কার নাশকতার মামলায় আসামি হয়। ৮২ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয় পুলিশের সঙ্গে সংঘাত ও গুলিতে। আন্দোলনে নামলে, আবারও একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে- এ আশঙ্কায় বিএনপির পাশে থাকতে নারাজ জামায়াত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত