নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ জুলাই, ২০১৫ ২৩:১৫

সিলেট ছাত্রলীগে নতুন মেরুকরণ : আসাদ গ্রুপের উত্থান!

সিলেটে ছাত্রলীগ আগে ৪ বলয়ে বিভক্ত ছিলো। এই ৪ বলয়ে নেতাদের নাম ও নির্দেশনায়ই পরিচালিত হতো সিলেট ছাত্রলীগের কার্যক্রম। এরাই ভাগবাটেয়ারা করে নিতেন জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের পদপদবি। তবে এবার ছাত্রলীগে নতুন মেরুকরণ দেখা দিয়েছে। ৪ গ্রুপের বাইরে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন গ্রুপ। পুরনোদের হটিয়ে নতুন গ্রুপ বাগিয়ে নিচ্ছে পদপদবি।

সোমবার সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে এই নতুন মেরুকরণের বিষয়টি। নবঘোষিত মহানগর ছাত্রলীগের ৪ সদস্যের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন আব্দুল আলীম তুষার। তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ অনুসারী নেতা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া সজল দাশ অনিক মহানগর ছাত্রলীরে সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক পিযুষ কান্তি দে’র অনুসারী।

ছাত্রলীগের মহানগর কমিটিতে নতুন গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নেওয়ার ফলে দীর্ঘদিন ধরে সিলেট ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করা ৪ নেতার ক্ষমতা অনেকটা খর্ব হওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করেন অনেকে। এতোদিন ধরে সিলেটে ছাত্রলীগকে আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন, আজাদুর রহমান আজাদ, শফিউল আলম নাদেল ও বিধান সাহা নিয়ন্ত্রন করে আসছিলেন। এদের নিয়ন্ত্রিন গ্রুপগুলো যথাক্রমে তেলিহাওর গ্রুপ, টিলাগড় গ্রুপ, দর্শন দেউড়ি গ্রুপ ও কাশ্মির গ্রুপ নামে পরিচিত। এই গ্রুপগুলোই সিলেটে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রন করে আসছিলো। জেলা ও মহানগর কমিটির পদপদবি এই চার গ্রুপই ভাগবাটেয়ারা করে নিতো। এরমধ্যে জেলা কমিটি ছিলো টিলাগড়-তেলিহাওরের নিয়ন্ত্রনে এবং মহানগর কমিটি ছিলো দর্শন দেউড়ি-কাশ্মীর গ্রুপের নিয়ন্ত্রনে।

মহানগর কমিটির মাধ্যমে মূলত উত্থান ঘটেছে আসাদ উদ্দিন আহমদ গ্রুপের। আর শীর্ষ দুটি পদের মধ্যে একটিও দখলে রাখতে না পেরে অনেকটাই পতন ঘটেছে বিধান সাহা গ্রুপের। মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান ছিলেন বিধান সাহা গ্রুপের অনুসারী। নতুন কমিটিতে বিধান সাহার অনুসারী সৈকত চন্দ্র রিমি সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।

তবে অবস্থান ধরে রেখেছেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তাঁর অনুসারী আব্দুল বাসিত রুম্মন নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছেন।

 

মহানগর কমিটির আগে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে এই চার গ্রুপের বাইরে সহ-সভাপতিসহ কয়েকটি পদ দখল করে নেন জেলা আ্ওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী অনুসারীরা। টিলাগড় গ্রুপে ভাঙ্গন ধরিয়ে ছাত্রলীগে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেন শফিকুর রহমান।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন দীর্ঘদিন থেকেই ছাত্রলীগে নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা করে আসছিলেন। নিজ অনুসারীদের কমিটিতে জায়গা পাইয়ে দিতে লবিং চালিয়ে আসছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। তবে কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে নেওয়ার মধ্য দিয়েই মূলত ছাত্রলীগে আসাদ উদ্দিন আহমদ বলয়ের সৃষ্টি হলো।

নবগঠিত কমিটিতে উত্থান ঘটেছে পিযুষ কান্তি দে গ্রুপেরও। সাবেক কাশ্মীর গ্রুপের নেতা পিযুষ পুরনো বলয় থেকে আলাদা হয়ে নিজেই গ্রুপ অধিপতি হয়ে উঠেছেন। এবারই প্রথম তাঁর অনুসারী কোনো নেতা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন। পিযুষ অনুসারী সজল দাশ অনিক নবগঠিত কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।

নতুন নতুন গ্রুপের উত্থান, পদ পদবি দখল করে নেওয়ার ফলে সিলেট ছাত্রলীগে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ৪ গ্রুপের নিয়ন্ত্রন এবার হুমকীর মুখে পড়েছে। দেখা দিয়েছে নতুন মেরুকরণ।

এদিকে, মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পদবঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিশেষ করে কাঙ্খিত পদ না পেয়ে ক্ষুব্দ কাশ্মীর গ্রুপের নেতাকর্মীরা।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও কাশ্মীর গ্রুপের নেতা এমরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় আছেন জানিয়ে কমিটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি রাহাত তরফদার বলেন, কমিটি নিয়ে কিছু ক্ষোভ আছে। তবে আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

এ ব্যাপারে বিধান কুমার সাহা’র সাথে কথা বলতে একাধিকবার তাঁর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

তবে নতুন মেরুকরণ ও নিজস্ব গ্রুপ তৈরির কথা অস্বীকার করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ বলেন, ছাত্রলীগ এখন সার্বজনীন হয়েছে। আগে নেতাকর্মীদের মধ্যে ধারণা ছিলো, পদপদবি পেতে হলে একটা গ্রুপ করতেই হবে। গ্রুপ না করলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদ পাওয়া যাবে না। কয়েকটি গ্রুপের দখলেই থাকতো পদপদবি। নতুন কমিটি এই ধারণাকে ভেঙ্গে দিয়েছে। এতে ছাত্রলীগই লাভবান হবে।

গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রুপ করা কোনো বিষয় নয়, যোগ্যতাই আসল- এটি প্রমাণ হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করি। কোনোদিনও গ্রুপিং করিনি। এখনো করবো না।

আসাদ উদ্দিন বলেন, আমার কাছে ছাত্রলীগের কয়েকজন এসেছিলো কমিটিতে পদ পাওয়ার ইচ্ছা পোষন করে। আমার কাছে তাদেরকে ভালো মনে হয়েছে। তাই তাদের সিভি কেন্দ্রিয় কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় কমিটি ভালো মনে করেছে তাই তাদের একজনকে সেক্রোটারি করেছে। এখানে গ্রুপিংয়ের কিছু নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত