রাইআন কাব্য

১৫ আগস্ট, ২০১৫ ০১:৫৪

আগস্ট এলেই বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ ওঠে

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মাস আগস্ট এলেই কেবল পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রসঙ্গ ওঠে। এর বাইরে বছরের বাকি মাসগুলোতে আর কোন কথাও ওঠে না, কী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে সে নিয়েও আলোচনা হয় না।

প্রতিবারের মতো এবারের আগস্টের শুরু (৭ আগস্ট) এ প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বলেন- বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ইন্টারপোলকে জানাবো।

আইজিপি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনির মধ্যে ৬ জনের অবস্থান জানতে এবং তাদের বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবো।

এরপর সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। আওয়ামী লীগ নেতারা মাসের শুরু থেকেই এ দাবি জানাতে থাকেন। গত কয়েক বছর থেকে প্রতি বছরের আগস্ট মাসে এমন দাবি জানানো হচ্ছে, কিন্তু মাস শেষ হয়ে গেলেই এ নিয়ে সরকারের কোন মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের এমন বক্তব্য জোরগলায় দিতে দেখা যায় না।

এদিকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক ছয় খুনির মধ্যে চারজনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই চারজনের অবস্থান জানতে এবং তাদের ফেরাতে ‘সব কূটনতিক চেষ্টা’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে। দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে বর্বরোচিত হত্যার দায়ে সেনাবাহিনীর সাবেক ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ৫ জন্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এরা হচ্ছে লে. কর্নেল ফারুকুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), শাহরিয়ার রশিদ খান, এ কে এম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার) ও মেজর বজলুল হুদা। বজলুল হুদাকে ব্যাংকক থেকে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলাতকরা হলেন, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন কয়েক মাস আগে এক কলামে লেখেন, রাশেদ চৌধুরীকে আশ্রয় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হয় না বলে কানাডা জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর এই খুনিকে ফেরত দিতে কানাডাকে রাজি করাতে ‘কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে’ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

“আমরা আশা করছি যে, বর্তমান সরকার মেয়াদে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থানরত) অন্তত একজনকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে।”

খন্দকার আবদুর রশিদ (অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল), শরিফুল হক ডালিম (অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল), আব্দুল মাজেদ ও মোসলেহউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকার কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই বলে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার জানান।

মাঝে মাঝে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিক খবর মিললে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য নেই।”

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনৈতিক পালাবদলের এক পর্যায়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১২ সেনা কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষায় জিয়াউর রহমান পরে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করেন, যা ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর বাতিল করা হয়।

“খুনিদের অবস্থান বের করে তাদের ফিরিয়ে আনাটা কষ্টকর প্রক্রিয়া। তবে আমরা সব চেষ্টা চালিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনাটা আমাদের অঙ্গীকার” বলেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা নবায়ন করে সরকার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত