সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ আগস্ট, ২০১৫ ০১:৩৫

‘বন্দুকযুদ্ধে’ কর্মী নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

র‍্যাবের সাথে কথিত 'বন্দুকযুদ্ধে' প্রায়শই মৃত্যুর খবর দেয়া হয় গণমাধ্যমে। হাজারীবাগে ছাত্রলীগ নেতা আরজু মিয়াও একি ধরনের 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছিলো র‍্যাব।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের তিনজন নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

দলটির অনেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে বলেছেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে শিশু হত্যা এবং নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তা দমনের জন্য সরকার এখন শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে আটক সেখানকার ছাত্রলীগ নেতা আরজু মিয়া গত মঙ্গলবার র‍্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বলে বাহিনীটি বলেছে।

কিন্তু হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করে বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ঐ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এটা বন্দুকযুদ্ধ নয়, ছাত্রলীগ নেতা আরজু মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসও সংবাদমাধ্যমে একই বক্তব্য দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

দলটির সিনিয়র নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, “শিশু পিটিয়ে হত্যা বা নারী নির্যাতনের মর্মান্তিক যেসব ঘটনা ঘটছে,সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমাধান নয়।বরং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তার আদর্শ দিয়ে অনুপ্রাণিত করতে হবে।”

ঢাকার হাজারীবাগের ঘটনা ছাড়াও সম্প্রতি মাগুরা জেলায় ছাত্রলীগের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত এবং একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা দু’দিন আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

কুষ্টিয়াতেও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের এক ঘটনায় আটক যুবলীগের একজন নেতা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

ছাত্রলীগ এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রাজনৈতিক বিতর্ক না করে কেউ মামলা করলে, তখন বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে।
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘসময় ধরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে।

আওয়ামী লীগও বিরোধীদলে থাকার সময় ক্রসফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধের প্রতিবাদ করেছে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় এ ধরণের কোন ঘটনার ব্যাপারে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হয়নি।

যদিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে আসছে।

এখন ছাত্রলীগ নেতা নিহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা প্রশ্ন তুলছেন।

অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দাবি করেছেন, হাজারীবাগের ঘটনাসহ সবক’টি ঘটনাই ঘটেছে বন্দুকযুদ্ধে।

আওয়ামী লীগ নেতা এবং মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতার নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক কারণে স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগে সামগ্রিকভাবে কোন অস্বস্তি নেই বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি আরও বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমাজে শিশুকে পিটিয়ে হত্যা এবং নারী নির্যাতনে ঘটনা বেড়েছে, সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে।

আর সেই অবস্থানের ক্ষেত্রে দলের কেউ বড় ধরণের অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে, তাকেও ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তবে, বন্দুকযুদ্ধ বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমাধান কিনা, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন এই মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অনেকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত