সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ২১:২০

ছাতকে ইউপি আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে ভূসম্পত্তি দখলের অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

ছাতকে এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রবাসীর ভূসম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসীর বসতবাড়ির গাছপালা কর্তন, সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ৪ একর জায়গাসহ ফসলি ১৫ একর জায়গা-জমি ওই নেতা ও তার লোকজন দখল করে নিয়েছেন বলে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন উপজেলার খুরমা মহব্বতপুর গ্রামের বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী ইসমাইল আলী। তিনি সম্পত্তি উদ্ধার ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইসমাইল আলী উল্লেখ করেন, তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে অবস্থান করছেন। এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদানসহ উন্নয়নে সাধ্যমতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসেও তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। আজ শেষ বেলায় এসে দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালিক ও তার লোকজনের কাছে তিনি অসহায়। প্রবাসে থাকায় কারণে দেশে অবস্থানরত তার ভাতিজারা জায়গা দেখভাল ও ভোগ দখল করে আসছে। ২০১৬ সালে স্বজনদের অসহায়ত্ব ও সরলতার সুযোগে জায়গার উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে খালিকের। সে ভাতিজা আপ্তাব মিয়ার কাছে ১০ কেদার জায়গা না হয় ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। জায়গা ও টাকা না দেওয়ায় ওই বছরের ১৮ মে বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও গেট ভেঙ্গে ফেলে। ২২ মে থেকে বসতবাড়ির গাছপালা কেটে নিতে শুরু করে খালিক ও তার লোকজন। বাধা দিতে গিয়ে হামলায় আহত হন তার ভাতিজা আপ্তাব মিয়া।

বক্তব্যে আরো বলা হয়, খুরমা গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে আব্দুল খালিক ১৯৯২ সালে মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে গোবিন্দগঞ্জ কলেজে ভর্তি হয়। শুরুতে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে এবং পরবর্তীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট খুরমা বাজারে এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের সভায় গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনায় খালিকও জড়িত ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাজনীতির বোল পাল্টায় খালিক। সে আওয়ামী লীগে যোগদান করে এবং ২০১৬ সালে খুরমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এর পর থেকে সে এলাকায় একটি চক্র গড়ে তুলে। এ চক্রে রয়েছে তার ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস শহিদ, ভাতিজা উপজেলা যুবলীগ সদস্য মারুফ আহমদ, মহব্বতপুরের আফরোজ ও তার ভাই উকিল আলী, একই গ্রামের মতিন, খুরমার সালামত আলী, আলফত আলী, হান্নান, আরিছ আলী, আব্দুর রহমানসহ কয়েকজন।

প্রবাসী ইসমাইল আলী জানান, ছাতক উপজেলার মহব্বতপুর মৌজার  জে.এল নং- ৩৯২, নামজারি খতিয়ান নং-২৩, দাগ নং ২, ৩, ৪, ১০, ১১, ১৩, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৩৮, ১৮, ৪৪, এর ১৪ একর ৮৯ শতক বাড়ি ও ফসলি জমি রয়েছে। তিনি ক্রয়সুত্রে মালিক হয়ে দলিল, মাঠপর্চা, নামজারী ও ডিসিআরসহ কাগজপত্র এবং সরকারি খাজনা পরিশোধ করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ-দখল করে আসছেন।

এই জায়গার এসএ রেকর্ডিয় মালিক ছিলেন শিবেন্দু নন্দি চৌধুরী। ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে একই বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাগের ওই জায়গা তিনি, তার বড় ভাই ইউসুফ আলম, তার স্ত্রী রওশন আরা খাতুন, ভাতিজা কবির আলম ও বদরুল আলম ক্রয় করেন। পরবর্তীতে তিনি তার ভাই ও ভাবি এবং ভাতিজাদের কাছ থেকে পুরো সম্পত্তি ক্রয় করে ভোগদখল করেন আসছেন। শারীরিক অবস্থার কারণে ২০০৫ সালে তার ছেলে ফখরুল আলম ফারুক মিয়া, নাতি তৌফিকুল আলম, শফিকুল আলম, তৌসিউল আলম, শহিদুল আলম এবং ভাতিজা সুনা মিয়া ও আপ্তাব মিয়ার নামে সম্পত্তি দলিল করে দেন। পরবর্তীতে দলিল গ্রহীতারা নিজ নিজ নামে নামজারি করিয়ে নেন এবং খাজনা পরিশোধ করে আসছেন।

বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, গাছ কেটে বাড়ি দখলের ঘটনায় তার ভাতিজা আপ্তাব থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ জিডি হিসেবে গ্রহণ করে। পরে সুনামগঞ্জ আদালতে মামলা করা হয়। সিআর মামলা নং ৪১/১৭। এ মামলা থেকে পুলিশ তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু আদালতে নারাজি দিলে আদালত সরাসরি তাকে আসামিভূক্ত করেন। আর এ মামলায় প্রায় দেড়মাস জেল খাটে খালিক। গত ২ জানুয়ারি জেল থেকে বের হয়ে খালিক আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং ৩-৪ জানুয়ারির মধ্যে ১৫ একর জায়গা ছাড়াও অন্যান্য বোরো জমি দখল করে ফসল লাগাচ্ছে। এমনকি আবার পুকুরের মাছ ও গাছপালা কেটে নেয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হলে এখনো মামলা রেকর্ড করেনি ছাতক থানা পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে ইসমাইল আলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ভাতিজা আপ্তাব মিয়া, ভাগনা সুফি মিয়া, জুয়েল খান প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত