নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ মার্চ, ২০২২ ২০:২৩

স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতায় জয় বঞ্চিত বাংলাদেশ

বাংলাদেশ কেন স্কোর করতে পারছে না, সুযোগ তৈরি করেও কেন গোলের দেখা পাচ্ছে না- সোমবার এমন প্রশ্ন করা হয়েছিলো বাংলাদেশ দলের স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ জীবনকে।

সিলেটে এসে সোমবারই প্রথম অনুশীলন করে বাংলাদেশ। অনুশীলন শেষে  সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে এসেছিলেন জীবন। এসেই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো তাকে।

ফিনিশিংয়ে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়ে জীবন আশ্বাস দিয়েছিলেন আজ মঙ্গলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠবেন।

আশ্বাসের বাস্তবায়ন করতে পারেননি জীবন। পারেনি তার দলও। বরং আজ সিলেট স্টেডিয়ামে মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা।  কয়েকটি সহজ সুযোগও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। গোল করতে পারেনি মঙ্গোলিয়াও। ফলে গোলহীন একটি ম্যাচ দেখতে হলো সিলেট স্টেডিয়ামে হাজির হওয়া হাজার ১৫ দর্শককে।

কাগজে কলমে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে মঙ্গোলিয়া। ফিফা র‍্যাংকিংয়ে দুইধাপ এগিয়ে মঙ্গোলিয়া। তবে মাঠে র‍্যাংকিংয়ের কোন প্রতিফলন ছিলো না। পুরোটা সময়ই মঙ্গোলিয়াকে চাপে রেখেছে জামাল ভুইয়ার দল। মূহুর্মূহ আক্রমনে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে মঙ্গোলিয়ান রক্ষণভাগকে। কিন্তু তাতে কী! ফুটবল তো শেষ পর্যন্ত গোলের খেলা। সেই সোনার হরিণেরই দেখা পায়নি বাংলাদেশ। নিজের মাঠ আর গ্যালারি ভর্তি দর্শকসমেত এমন বাগে পেয়েও হারানো যায়নি মঙ্গোলিয়াকে।

ফলে মাঠে বেশিরভাগ সময় বল দখলে রাখা, বারবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে ঢুকে পড়া সত্ত্বেও হতাশ হয়েই ফিরতে হলো দীর্ঘদিন পর মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ পাওয়া সিলেটের দর্শক। বারবার মঙ্গোলিয়ার ডিফেন্স ভেদ করেও লক্ষহীন আর দুর্বল শটে  গোল মিস করার মহড়া বরং আরও আফসোস বাড়িয়েছে দর্শকদের।

তবে এই আফসোস আর হতাশা খেলা চলাকালীন সময় পর্যন্তই। খেলা শেষ হওয়ার পর দর্শকরা দাঁড়িয়ে ও করতালির মাধ্যমে যেভাবে উভয়দলকে অভিভাদন জানালেন, তাতে সিলেটের দর্শকদের স্পোর্টিং খ্যাতি আরেকটু বাড়লোই বৈকি।

ম্যাচ শুরুর প্রথম মিনিটেই সুযোগ পায় বাংলাদেশ। মধ্য মাঠ থেকে ইব্রাহিমের বাড়ানো বলে ডি বক্সে ফুকে  বাম পাশে জোরালো শট করেন রাকিব হোসেন। কিন্তু এই প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন মঙ্গোলিয়ার গোলরক্ষক মনখ-এরদেনে এনখতাইভান। খেলার তৃতীয় মিনিটে আবার আক্রমণে যায় লাল সবুজরা।

খেলার ১০ মিনিটে আবার আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। এবার  সেটা প্রতিহত করেন মঙ্গোলিয়ান ডিফেন্ডাররা। ১২ মিনিটে ইয়াসিন ফের সুযোগ নষ্ট করেন।

শুরুতে মঙ্গোলিয়ানরা ছিলো রক্ষণাত্মক। তবে সময় যত গড়াতে থাকে তারাও আক্রমণাত্মক হতে থাকে। বেশ কয়েকবার আক্রমণ চালালেও বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা পরাস্ত করেন।

ম্যাচের ২৮ তম আবারও সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। ৩২ মিনিটে আবারও আক্রমণে যাওয়া রাকিবের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেন মঙ্গোলিয়ান গোলরক্ষক। মিনিট চার পর ফ্রি-কিক পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি জামালরা। এর দুই মিনিট পর মঙ্গোলিয়া আক্রমণে গেলে ডি-বক্সের ভেতর থেকে চেষ্টা নস্যাৎ করেন তারিক কাজী। ৪০ মিনিটে জামালের ফ্রি-কিক থেকে পাওয়া বল গোলের সুযোগ তৈরি হয়। তবে সুমন রেজার সেই শট বারে লেগে ফিরে আসলে ফের সুযোগ হাতছাড়া হয়। সুমন বঞ্চিত হন নিজের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক গোল থেকে।

৪৪ মিনিটে আবারও জামালের বাড়ানো বল ডি-বক্স থেকে প্রতিহত করেন মঙ্গোলিয়ান ডিফেন্ডাররা। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত চার মিনিট সময় যোগ হয়। শেষ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে জামালের বাড়ানো শটে আবারও সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন সুমন রেজা। ফলে গোল শূন্য থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে দুই দল।


দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে বাংলাদেশ। প্রথম মিনিটেই থ্রো-ইন পায় বাংলাদেশ। তবে ডি বক্সে ঢুকার আগেই প্রতিহত করে মঙ্গোলিয়া। চলে যায় পাল্টা আক্রমণে। এভাবে দু দলই আকক্রমণ পাল্টা আক্রমণে মেতে উঠে। সুমন রেজাও কয়েকবার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। ৫৯তম মিনিটে আবারও লম্বার শট সোজা গোল কিপার তালুবন্দী করেন। পরের মিনিটেই সুমন রেজাকে তুলে নেওয়া হয় মাঠ থেকে। তার বদলী হিসেবে মাঠে নামেন দীর্ঘদিন পর ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা নাবিব নেওয়াজ জীবন।

৬১ তম মিনিটেই সুযোগ তৈরি করে দেন জামালকে। জামাল লম্বা শট নিলে মঙ্গোলিয়ার গোলরক্ষক তা তালুবন্দী করেন। চার মিনিট পর লম্বা এক শট নেন জীবন। তবে হেড করতে পারেননি রাকিব। পরের মিনিটেই রাকিবকে বল বাড়িয়ে দেন জামাল। তবে রাকিবকে পরাস্ত করেন মঙ্গোলিয়ান ডিফেন্ডার। তিনি পরে যান। পেনাল্টির আবেদন করেন। কিন্তু রেফারি তাতে সায় দেননি।

৭০ মিনিটে রিমনের বাড়ানো শট জামালের পায়ে লাগে। তবে গোলরক্ষক বাধা হয়ে দাঁড়ালে কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা পায় মঙ্গোলিয়া। ৭২ মিনিটে ইব্রাহিম একাই বল নিয়ে ঢুকে যান ডি-বক্সে। তবে সে সুযোগও নস্যাৎ হয় গোলরক্ষকের হাতে লেগে। ডিফেন্ডাররা দ্রুত ক্লিয়ার করলে পাল্টা আক্রমণে যায় মঙ্গোলিয়া। তবে বাংলাদেশের গোলরক্ষক জিকো সেটা রক্ষা করেন।

খেলার ৭৫ মিনিটে তুলে নেওয়া হয় অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে। তার বদলী হিসেবে মাঠে নামানো হয় জাফর ইকবালকে। অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে যান জীবনকে। পরের মিনিটেই কর্ণার পায় বাংলাদেশ। সেটাও প্রতিহত করেন গোলরক্ষক মনখ-এরদেনে। পরের মিনিটে বিপলু গোলের সুযোগ তৈরি করলেও ব্যর্থ হয়।

৭৬ মিনিটে মাঠে দুই পরিবর্তন আনে মঙ্গোলিয়া। অবশ্য এর দুই মিনিট পর আবারও আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু লোকাল হিরো বিপলু সুযোগ হাতছাড়া করেন।

৭৭ মিনিটে মাঠে দুই পরিবর্তন আনে মঙ্গোলিয়া। অবশ্য এর দুই মিনিট পর আবারও আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু লোকাল হিরো বিপলু সুযোগ হাতছাড়া করেন। পরের দুই মিনিটে পরপর দুবার সোহেল রানাকে গোলের সহজ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন মঙ্গোলিয়ান ডিফেন্ডাররা।

৮৭ মিনিটে দুই পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ফের দুবার গোলের সুযোগ তৈরি হয় বাংলাদেশের। দুটো সুযোগই থ্রোইনের বিনিময়ে রক্ষা করে মঙ্গোলিয়ানরা বাংলাদেশকে গোল বঞ্চিত করে।

নির্ধারিত সময় শেষে খেলায় অতিরিক্ত সময় আরও ৫ মিনিট যোগ হয়। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটেই আক্রমণে যায় মঙ্গোলিয়া। সেটা রক্ষা করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক জিকো। ৯২মিনিটের সময় হলুদ কার্ড দেখেন মঙ্গোলিয়ার গাল এরদেনে।। শেষ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েও বল পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন জাফর।


দ্বিতীয়ার্দে মাঠের নিয়ন্ত্রন পুরোটাই নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ছোট ছোট পাসে বারবার জীবনরা ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষ্যের রক্ষনভাগে। কিন্তু রক্ষনব্যুহ আর ভেদ করা সম্ভব হয়নি তাদের।

ফলে ম্যাচ শেষে স্কোরবোর্ডে দুইদলের নামের পাশেই শূন্য ঝুলে থাকলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত