স্পোর্টস ডেস্ক

০৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০১:৪৬

অস্ট্রেলিয়ার বাড়াবাড়ি: আইসিসির সভায় প্রশ্ন তুলবে বিসিবি

অস্ট্রেলিয়ার বাড়াবাড়ি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো রূঢ় মন্তব্য করছেন না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তারা। বরং সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথাই বলা হচ্ছে আনুষ্ঠানিকভাবে।

তবে ভেতরের খবর হলো, আইসিসির পরবর্তী সভায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সওয়াল-জবাব করবে বিসিবি। সে যুদ্ধে আরো অনেক সঙ্গী পাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্টই প্রত্যয়ী শোনাচ্ছে বিসিবির ঊর্ধ্বতনদের। ফেব্রুয়ারিতে সে সভা বসবে দুবাইয়ে।

বুধবার একটি অনুষ্ঠানে মিডিয়ার প্রশ্নের মুখে অস্ট্রেলিয়া ইস্যুতে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ’ স্লোগানই শুনিয়ে গেছেন বিসিবির সহসভাপতি মাহবুব আনাম, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আইসিসিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রটোকল নিশ্চিত করা হয়েছে। তাতে আশ্বস্ত হয়েছে বলেই আইসিসি বাংলাদেশ থেকে ভেন্যু সরিয়ে নেয়নি। এখন কোনো একটি দেশ যদি এতেও সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে আশা করি আইসিসি বিষয়টি দেখবে।’

তা ছাড়া আয়ারল্যান্ডকে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শূন্যস্থান পূরণ এবং যথাসময়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনে বিসিবির প্রস্তুতিতেই আপাতত বেশি মনোযোগী মাহবুব, ‘টুর্নামেন্টটা যেন সফলভাবে সম্পন্ন হয়, আমাদের মূল চিন্তা এখন এটাই। আমরা আশাবাদী সফলভাবে সেটি শেষও হবে।’

আপাতত টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজনে মনোনিবেশ করলেও ভেতরে ভেতরে অন্য যোগাযোগও শুরু করেছে বিসিবি। সংস্থার নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে যে, আইসিসির পরবর্তী সভায় নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়ার দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করা হবে। অন্য আরো কয়েকটি প্রভাবশালী বোর্ডের সমর্থনও মিলবে বলে আশাবাদী বিসিবি। একমাত্র অস্ট্রেলিয়া ছাড়া অন্য দলগুলো যখন অংশ নিচ্ছে, তাতে আইসিসির সভায় অস্ট্রেলিয়াকে কাঠগড়ায় তুলে উল্টো বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা নেই বিসিবির। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিসিআই) ব্যাপক পরিবর্তনের সূত্র ধরে এন শ্রীনিবাসনের আইসিসির চেয়ারম্যান পদ হারানোও বাংলাদেশের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেট পরিমণ্ডলে।

এর আগেও বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি সামনে রেখে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই আয়োজিত হয়েছিল আসরটি। যে আসরে পুরুষদের পাশাপাশি হয়েছিল নারীদের বিশ্বকাপও। দুটি বিভাগেই অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতায় ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডেরও অজানা নয় যে আইসিসির টুর্নামেন্টে বাংলাদেশে নিরাপত্তা কেমন নিশ্ছিদ্র থাকে। কাজেই আসন্ন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে অস্ট্রেলিয়া নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর তাদের জায়গায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া আইরিশরাও আশ্বস্ত। আইসিসি ও আয়োজক দেশের তৈরি করা নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েও তারা সন্তুষ্ট।

অসন্তোষ যা ছড়িয়ে পড়ার, তা বরং অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই। গত অক্টোবরেই নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে বাংলাদেশে তাদের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ স্থগিত করা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এবারও দেখিয়েছে সেই একই যুক্তি। যদিও তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার দিনই আবার ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) এক বিবৃতির মাধ্যমে নিজেদের দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতই করেনি শুধু, এও বলেছে, ‘এর পরও আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশ সফরে যাব। আইসিসি ও স্বাগতিক দেশ মিলে যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করেছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এই সফরে আমাদের নিরাপত্তা কর্মকর্তাও দলটির সঙ্গী হবে।’

বাংলাদেশে যুব বিশ্বকাপ খেলতে আসার ভাবনায় উদ্বেগ সঙ্গী হয়নি অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর কোনো দলেরই। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরও তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের বার্তা দিয়ে রেখেছে। তবু ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড দলও নিরাপত্তার বিষয়ে শতভাগ আশ্বস্ত হয়েই ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া আসরে অংশ নিতে আসছে। এই অবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকার পরেও না আসার সিদ্ধান্তে অস্ট্রেলিয়া সমালোচিত হচ্ছে খুব। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান তো এক হাতই নিয়েছেন সিএ-কে। হতাশা ব্যক্ত করে আইসিসির এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা যেমন বলেছেন, তেমনি ক্ষতিপূরণের দাবিও তুলেছেন, ‘নিশ্চিত একটি আসর থেকে কোনো দল নাম প্রত্যাহার করে নিলে অবশ্যই তাদের জরিমানা করা উচিত। আর সেটি দেওয়া উচিত স্বাগতিকদের। কারণ আসর আয়োজনের জন্য তাদের খাটুনিটাই তো বেশি।’

অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা জুজু নিয়ে আগে থেকেই ক্ষিপ্ত পাকিস্তান। রাজনৈতিক কারণে তারা বাতিল করেছিল জিম্বাবুয়ে সফর। অস্ট্রেলিয়ার এমন আচরণের ক্ষত মনে আছে শ্রীলঙ্কার। আর স্বপ্রণোদিত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশে আগমন বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি জানাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার আচরণে বিরক্ত তারাও। সঙ্গে ‘বিগ থ্রি’ বিরোধী মন্তব্য করা বিসিসিআই প্রধান শশাঙ্ক মনোহরের এ ইস্যুতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যা, তাতে আইসিসির পরবর্তী সভায় বিসিবির পক্ষ থেকে জোর প্রতিবাদে বড় কোনো বিপত্তির ঝুঁকি নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত