নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০১:১১

পাঁচ বছর পর সিলেটে ফিরল টেস্ট

২০১৮ সালে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে টেস্ট ভেন্যু হিসেবে পথচলার শুরু হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। এরপর দীর্ঘ বিরতি। প্রায় পাঁচ বছর। দেশের সবচেয়ে সুন্দর এ স্টেডিয়ামে এই সময়ে কোন টেস্ট ম্যাচ হয় নি। পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে আবারও আজ আবারও লাল বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে সিলেটে।

এই টেস্টের মাধ্যমে বিশ্বকাপের ডামাঢোলের পর আবারও ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা। বাংলাদেশের ফেরাটা হচ্ছে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে।

দুই ম্যাচের সিরিজ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্র শুরু করবে দুই দলই।
প্রথম ম্যাচটি হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

ম্যাচটি মাঠে বসে দেখতে দর্শকদের খরচ করতে হবে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা, গ্রিন গ্যালারি ও পশ্চিম গ্যালারিতে খেলা দেখা যাবে এই টিকিটে। সবচেয়ে বেশি এক হাজার টাকা টিকিটের দাম গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের। পূর্ব গ্যালারি ২০০ টাকা ও ক্লাব হাউজে বসে খেলা দেখতে খরচ করতে হবে ৩০০ টাকা।

এই ম্যাচ খেলতে তিনদিন আগেই সিলেটে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। দুদিন ধরে অনুশীলনও করছে তারা। প্রথম ম্যাচের আগে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা থাকলেও ভ্রমণ ক্লান্তিতে সেটি বাতিল করে সফরকারী কিউইরা।

উইকেট দেখতে না পেরে হতাশ নিউজিল্যান্ড: টেস্ট ম্যাচের আগের দিন ক্রিকেটারদের উইকেট দেখা সাধারণ ব্যাপার। সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ড দলের ক্রিকেটারদের এই সাধারণ কাজটাই করতে দেওয়া হয়নি। বেশ কয়েকবার বলার পরও উইকেট দেখতে দেওয়া হয়নি সাউদি-উইলিয়ামসনদের। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ড দলের খেলোয়াড়েরা অসন্তুষ্ট।

সোমবার সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলন শেষে নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক টিম সাউদিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি না কেন দেখতে দেওয়া হয়নি। আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন।’ সিলেট স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জয়দীপ দাস এ নিয়ে বলেছেন, ‘এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। উইকেট-সম্পর্কিত বিষয় কিউরেটরের দায়িত্ব।’

অস্ট্রেলিয়ার টনি হেমিং আপাতত সিলেট স্টেডিয়ামের কিউরেটরের দায়িত্বে। এর আগে ভারতীয় কিউরেটর সঞ্জীব আগারওয়াল চাকরিচ্যুত হওয়ার পর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সহকারী কিউরেটর কবির হোসেন সিলেট স্টেডিয়ামের দায়িত্বে ছিলেন। এবার নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য সিলেটে ডাকা হয়েছে হেমিংকে।

সিলেট স্টেডিয়ামের মূল মাঠে অনুশীলনের সুযোগ না পেয়েও হতাশ কিউইরা। মঙ্গলবার খেলা, কিন্তু এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড দল মাত্র একবার মূল মাঠে ফিল্ডিং অনুশীলন করতে পেরেছে। তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই নম্বর মাঠে। সোমবার মূল মাঠ হয়ে দুই নম্বর মাঠে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের অনুশীলন করতে দেখে কিউইরা। মূল মাঠে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের নেট সেশন করতে দেখে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার উইল ইয়াং বেশ অবাক হয়েই বলছিলেন, ‘দেখো, ওরা কোথায় অনুশীলন করছে!’

নিউজিল্যান্ড দলের খেলোয়াড়েরা উইকেট দেখতে না পারলেও বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা রীতিমতো উইকেট নিয়ে গবেষণা করেছেন। সোমবার সকালে মাঠে ঢুকেই সবার আগে উইকেট দেখতে যান তাইজুল ইসলাম। একনজর চোখ বুলিয়ে যান বোলিং অনুশীলনে।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে আসেন নাজমুল হোসেন। হাঁটু গেড়ে বসে তিনি খুঁটিয়ে দেখলেন উইকেট। সঙ্গে ছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। দুজন মিলে প্রায় ২৫ মিনিট উইকেট নিয়ে আলোচনা করলেন। নাজমুল সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন ও হাবিবুল বাশারের সঙ্গেও দীর্ঘ আলোচনা করেন হাথুরুসিংহে।

দুপুরে দুই দলের অনুশীলন শেষে অবশ্য কিছুক্ষণের জন্য উইকেটের চেহারা দেখার সুযোগ হয়েছে দুই কিউই ক্রিকেটার উইল ইয়াং ও ডেভন কনওয়ের। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে উইকেটের কাভারের নিচে মাথা ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ উইকেটের মাঝখানটা দেখার চেষ্টা করেছেন দুজন। তাতে উইকেট-রহস্য কতটা উদ্ঘাটিত হলো, কে জানে!

উইকেট নিয়ে যা বললেন শান্ত: সিলেটে মাঠে যেহেতু বাংলাদেশ দলের টেস্ট ম্যাচ তেমন একটা খেলা হয়নি তাই ম্যাচের আগের দিন কোচ হাথুরুসিংহা কে নিয়ে দীর্ঘ সময় পিচটা বুঝার চেষ্টা করেছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
এদিন মাঠে দীর্ঘ অনুশীলনে করেছে টাইগাররা। কোচ হাতুড়ে সিংহে অনুশীলনে টাইগার ব্যাটার ও বোলারদের দিয়েছেন মন্ত্র।

এদিকে সিলেটে প্রথম টেস্টের আগে সোমবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন টাইগার এই ব্যাটার। সিলেটর উইকেট সম্পর্কে শান্ত বলেন, কী ধরনের উইকেট এখানে হবে, সেটা বলা ঠিক হবে না, ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়। আপনারা হয়তো কাল দেখলে পরিষ্কার একটা ধারণা পাবেন। আমরা খেলোয়াড়রা যতটুকু পেরেছি, ধারণা নিয়েছি। আমাদের যে শক্তি আছে, ওই অনুযায়ী কালকে আমরা মাঠে আসব। তো কাল ম্যাচ শুরু হলে আরও পরিষ্কার ইনফরমেশন আমরা পাব।

শান্ত বিশ্বাস করেন সব ফরম্যাটের অধিনায়ক হতে প্রস্তুত তিনি।

 শান্ত বলেন, সব ফরম্যাটের জন্যই আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় ওই যোগ্যতা আমার আছে। এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। আর যেই অধিনায়ক হবে সে যদি লম্বা সময় ধরে থাকে তাহলে তার প্লান করাটা সুবিধার হবে। সামনে যেই আসবে আর আমি যদি সুযোগ পাই অনেক ভালো কিছু করবো এবং প্লান করতে সুবিধা হবে।

সাকিব-তামিম-লিটন-তাসকিন ছাড়া বাংলাদেশ দল নতুন বলতে নারাজ শান্ত। তার মতে দল নতুন না অভিজ্ঞতা কম দলের। অবশ্যই এটা একটা না একটা সময় হবেই। এটা একটা সুযোগ যে আমরা যারা তরুণ ক্রিকেটার বা নতুন দলে এসেছে তাদের জন্য। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া উচিত এবং প্রত্যেক খেলোয়াড় তার জন্য প্রস্তুত। এই সুযোগটা কীভাবে কাজে লাগাবে সেটার জন্য তারা পরিকল্পনা করছে।

আজ মঙ্গলবার প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে উভয় দল মাঠে নামবে। ওই ম্যাচ শেষে উভয় দলই ফিরে যাবে ঢাকায়। ৬ ডিসেম্বর মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত