স্পোর্টস ডেস্ক

২৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৭:১৬

চ্যাম্পিয়ানদের হারিয়ে শুভসূচনা বাংলাদেশের

দেশের মাটিতে বিশ্বশিরোপা রেখে দিতে চাওয়া স্বাগতিক বাংলাদেশের যুবাদের বিপক্ষে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩ রানে হেরেছে। ফলে, জয় দিয়েও শুরু হলো মেহেদি হাসান মিরাজের দলের। গ্রুপপর্বের পরের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে কক্সবাজারে ৩১ জানুয়ারি মাঠে নামবে পিনাক-সাইদ-শান্ত-শাওনরা।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিক বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৪০ রান। টাইগারদের ছুঁড়ে দেওয়া ২৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৮.৪ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে তোলে ১৯৭ রান।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন স্বাগতিক বাংলাদেশের দলপতি মেহেদি হাসান মিরাজ। টাইগারদের হয়ে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৭৩ রান আসে ইনফর্ম এই ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে। এছাড়া দলের সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ওপেনার পিনাক ঘোষ ও তিন নম্বরে নামা জয়রাজ শেখ।

বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন ২৯ ম্যাচ খেলা সাইফ হাসান ও ২২ ম্যাচ খেলা পিনাক ঘোষ। প্রথম তিন ওভারে কোনো রান নিতে পারেননি স্বাগতিকদের দুই ওপেনার। ৫ ওভারে মাত্র তিন রান নিলেও এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন দুই ওপেনার। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান পিনাক ঘোষ। ইনিংসের দশম ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ওপেনার সাইফ হাসান। মুলডারের বলে আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৬ রান। দলীয় ৩০ রানের মাথায় বাংলাদেশ তাদের প্রথম উইকেট হারায়।

আরেক প্রান্তে দারুণ ব্যাট করতে থাকেন পিনাক ঘোষ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে অনবদ্য একটি সেঞ্চুরি আসে। টাইগার এ যুবা ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ১৫০ রানের ইনিংসও খেলেছিলেন।

দলীয় ৩০ রানের মাথায় বাংলাদেশ তাদের প্রথম উইকেট হারায়। ওপেনার সাইফ বিদায় নিলেও রানের চাকা ঘোরাতে থাকেন ৩৮ ম্যাচ খেলা জয়রাজ শেখ ও ইনফর্ম ব্যাটসম্যান পিনাক ঘোষ। দলীয় ৭৪ রানের মাথায় রান আউট হয়ে ফেরেন ৫১ বলে ৪৩ রান করা পিনাক। তার ইনিংসে ৪টি বাউন্ডারির সাথে ছিল দুটি ওভার বাউন্ডারি।

১০৩ রানের মাথায় বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায়। ২৪তম ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জয়রাজ শেখ। ৫০ বলে ৪৬ রান করার পথে তার ব্যাট থেকে ৬টি চারের পাশাপাশি একটি ছক্কাও আসে।

এরপর ৫১ ম্যাচ খেলা মেহেদি হাসান মিরাজ ও ৫৩ ম্যাচ খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত রানের চাকা ঘোরাতে থাকেন। এ দুই টাইগার ব্যাটসম্যান স্কোরবোর্ডে ৬৮ বলে নিজেদের ৫০ রান যোগ করেন। তাদের জুটি ভাঙে ৫৯ রানে। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে প্রোটিয়া দলপতি টনি জর্জির বলে লুডিকের তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেন টাইগার দলপতি মেহেদি হাসান মিরাজ। আউট হওয়ার আগে টাইগার অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান। তার ৩৮ বলের ইনিংসে ছিল তিনটি বাউন্ডারি।

পঞ্চম ব্যাটসম্যান হয়ে বিদায় নেন জাকির হাসান। ৪৫তম ওভারে মুলডারের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। অর্ধশতক হাঁকানো নাজমুল শান্তর সঙ্গে ৪৫ রানের দারুণ একটি জুটি গড়েন জাকির। পরের ওভারে ৪ রান করে বিদায় নেন সাইদ সরকার।

প্রস্তুতি ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০২ ও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৯ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত এ ম্যাচের মধ্যদিয়ে ১৬০০ রান স্পর্শ করেন। বিশ্বমঞ্চে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৯ বলে অর্ধশতকের দেখা পান শান্ত। ৭৩ রান করে ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বোল্ড হন শান্ত। তার ৮২ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মার।

শেষদিকে সাইফুদ্দিন ১৭ ও সঞ্জিত সাহা ২ রান করে অপরাজিত থাকেন। প্রোটিয়াদের হয়ে মুলডার সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট তুলে নেন।

২৪১ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। টাইগারদের হয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেন দলপতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম ওভার মেডেন নিয়ে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দেন প্রোটিয়া ওপেনার কাইল ভেরায়নিকে। স্লিপে দাঁড়ানো সাইফ হাসানের তালুবন্দি হয়ে পেরেন এক রান করা এই ওপেনার।

ইনিংসের নবম ওভারে মুলডারকে (৮) বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন সাইফুদ্দিন। এরপর সাইফুদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন প্রোটিয়া দলপতি টনি ডি জর্জি। ইনিংসের ১৫তম ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে প্রোটিয়া অধিনায়ক করেন ৮ রান।

মেহেদি হাসান মিরাজের পর সাইফুদ্দিনের আঘাতে প্রোটিয়ারা তিন উইকেট হারায়। ইনিংসের ২১তম ওভারে সাইদ সরকার প্রোটিয়াদের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন। সাইদের বলে রিভালদো মনস্যামি ব্যক্তিগত ৫ রান করে এলবির ফাঁদে পড়েন। ডায়ান গালিয়েমকে (২২) বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন সাইদ সরকার।

২৫ ওভারের পর থেকে ৩৭ ওভার পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেনি দ. আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। ওপেনার লিয়াম স্মিথ ক্রিজের একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করতে থাকেন। ডায়ান গালিয়েমকে নিয়ে ৫২ রানের জুটি গড়েন স্মিথ।

ইনিংসের ৪২তম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ ফেরান ১৭ রান করা ফারহানকে। ৪৫তম ওভারে প্রোটিয়াদের সফল ব্যাটসম্যান ওপেনার লিয়াম স্মিথকে ফিরিয়ে দেন সালেহ আহমেদ শাওন। ১৪৬ বলে ১০০ রান করে মেহেদি হাসান মিরাজের তালুবন্দি হন স্মিথ। ক্যারিয়ারে প্রথম শতকের দেখা পাওয়া স্মিথ ৯টি চারের সাথে একটি ছক্কাও হাঁকান। একই ওভারে লুডিককেও ফিরিয়ে দেন শাওন।

৪৮তম ওভারে সাইফুদ্দিন এলবির ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন ৬ রান করা ফিল্যান্ডারকে। পরের ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ ফেরান শেন উইটহেটকে। ৮ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় দ. আফ্রিকা।

টাইগার যুবাদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফুদ্দিন ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দুটি করে উইকেট দখল করেন সালেহ আহমেদ শাওন ও সাইদ সরকার।

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টাইগার যুবারা শুরু করে তাদের বিশ্বকাপ অভিযান। ‘এ’ গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত