সিলেটটুডে স্পোর্টস ডেস্ক

১৫ মার্চ, ২০১৫ ২১:৩৬

রুবেল হোসেন: বাসে ছাদে চড়ে যিনি ঢাকা এসেছিলেন

বিশ্বক্রিকেটের বর্তমান সময়ের ব্যাটসম্যানদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠা পেস বোলার রুবেল হোসেনের বাবা চাননি ছেলে ক্রিকেটার হোক। তবু ক্রিকেটের প্রতি অকৃত্রিম টানে ঘর পালিয়ে রোজ ক্রিকেট খেলতেন তিনি।

রুবেলের ওঠে আসার নেপথ্যে গ্রামীণ ফোনের পেসার হান্ট প্রোগ্রাম। এরপরের কাহিনী ইতিহাস জাতীয় দলে ডাক পাওয়া এবং দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠা, ক্রমশ।

রুবেল হোসেনের পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিল না। বাগেরহাট থেকে ঢাকা আসেন যখন তিনি তখন তাঁর বাবা সিদ্দিকুর রহমান ছেলের হাতে ভাড়ার টাকা তুলে দিতে পারেননি। বাসের ছাদে চড়ে ঢাকা এসেছিলেন তিনি।

ক্রিকেটজীবনের প্রথমে ব্যাটসম্যান ছিলেন রুবেল। তাঁর জবানীতে শুনুন বিস্তারিত-‘আমি যখন ক্রিকেট শুরু করি, তখন ব্যাটসম্যান ছিলাম। বাবা ক্রিকেট খেলা পছন্দ করতেন না। খেলার কারণে আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাবাকে না জানিয়ে ক্রিকেট খেলেছি। আমি যখন ব্যাটিং করতাম কোন বোলার আমাকে আউট করতে পারতো না। ঢাকায় পেসার হান্ট কর্মসূচিতে অংশ নিয়েই পেস বোলার বনে যাই। প্রথমবার যখন আমি পেসার হান্টে ঢাকায় আসি তখন বাবা আমাকে ভাড়া দিতে পারেননি। বাসের ছাদে করে ঢাকায় আসতে হয়েছে আমাকে। প্রথমবার ঢাকা এসে অনেক বিপদে পড়েছিলাম। কোথাও থাকার জায়গা না থাকায় বিসিবি থাকার জায়গা ঠিক করে দেয়। ক্রিকেটই আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে।’

২০০৭ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগের পক্ষে অভিষিক্ত হন। খুলনা বিভাগের বিরুদ্ধে অভিষেকের ঐ খেলায় তিনি ১ উইকেট নেন ১৩৭ রানের বিনিময়ে।  জাতীয় ক্রিকেট লীগে ভালো ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলে মনোনীত হন। অল্পকিছুদিন বাদেই তিনি বাংলাদেশ এ দলে স্থানান্তরিত হন।

১৪ জানুয়ারি, ২০০৯ তারিখে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষেক ঘটে রুবেলের। ঐ খেলায় তিনি ৫ ওভার ৩ বল করে ৩৩ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট দখল করে বাংলাদেশের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

একই বছরের ৯ জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক ঘটে তার। ঐ খেলায় তিনি ৩ উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে ২০০৯ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে।

নভেম্বর, ২০১১ সালে পাকিস্তান দল বাংলাদেশে ৩টি ওডিআই এবং ২টি টেস্ট খেলে। প্রথম টেস্টে পাকিস্তান ইনিংসের ব্যবধানে জয়ী হয়। খেলায় বাংলাদেশ দল মাত্র ৫ উইকেট দখল করতে সক্ষম হয়েছিল। এ সময় রুবেলের গতিবেগ ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টা) হলেও তিনি কোন উইকেট লাভ করতে পারেননি।

২৯ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় তৃতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিকে হ্যাট্রিক করেন। তিনি একে-একে নিউজিল্যান্ডের শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান কোরে অ্যান্ডারসন, ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম এবং জিমি নিশামকে আউট করে এ বিরল কীর্তিগাঁথা রচনা করেন।

দ্রুতগতির বোলার হিসেবে শ্রীলঙ্কা দলের লাসিথ মালিঙ্গা’র সাথে তার ক্ষাণিকটা মিল রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তিনি পেস ও বাউন্সার নিক্ষেপ করতে পারেন।

রুবেল হোসেন জাতীয় দলে ঢোকার পর থাকতেন বাংলাদেশ দলের আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল এবং তার ভাই নাফিস ইকবালের সঙ্গে একই ফ্লাটে। এক পর্যায়ে তিনি মিরপুরে ফ্লাট কিনে সেখানে থাকতে শুরু করেন।

তরুণ এই ক্রিকেটারের বাড়ি খুলনা জেলার বাগেরহাট শহরের নাগের বাজার এলাকায়। বাবা ছিলেন দরিদ্র মৎস্যজীবী।

ভিডিও : ২৯ অক্টোবর ২০১৩ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা রুবেলের সেই হ্যাটট্রিক

আপনার মন্তব্য

আলোচিত