স্পোর্টস ডেস্ক

০১ জুন, ২০১৭ ০১:৪৫

বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিশন শুরু হচ্ছে আজ

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচ। মুখোমুখি ওয়ানডেতে গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা দুই দল বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট স্বাগতিক ইংল্যান্ড। অন্যদিকে আইসিসির কুলিন প্রতিযোগিতার 'কালো ঘোড়া'র তকমা নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠ হওয়ায় ইংল্যান্ড কিছুটা এগিয়ে থাকবে। তবে টাইগাররা বড় মঞ্চে যেকোনো দলকে হারানোর মতো যোগ্যতা অর্জন করেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচের মঞ্চ প্রস্তুত। সেই মঞ্চে রোমাঞ্চ ছড়ানোর পালা টাইগার ও থ্রি লায়ন্সদের।
 
বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচটি লন্ডনের কেনিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা টিভি, গাজী টিভি ও স্টার স্পোর্টস।
 
'এ' গ্রুপে বাংলাদেশের অপর দুই প্রতিপক্ষ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ফলে সেমিফাইনালে যেতে হলে উদ্বোধনী ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই মাশরাফিদের। ময়দানি লড়াই শুরু হওয়ার আগে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৪১ রান করেও শেষ দিকের নাটকীয়তায় হেরে যায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ৮৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে ২৪০ রানের বড় হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। অবশ্য গা গরমের ম্যাচের প্রভাব মূল মঞ্চে পড়ার কথা নয়।
 
অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে নিজেদের প্রস্তুতির শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী বোলিং লাইনের বিপক্ষে ৩০০ প্লাস রান করে দুটি ম্যাচেই জিতেছে ইংলিশরা। যদিও শেষ ম্যাচে ২০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসা ইংল্যান্ড ১৫৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে যায়।
 
বাংলাদেশের বিপক্ষে 'প্রতিশোধ' নেয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামতে পারে ইংল্যান্ড। ২০১১ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপে মাশরাফি-সাকিবদের কাছে হেরেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় 'থ্রি লায়ন্স'রা। টানা দুটি বিশ্বকাপে হারের তেতো স্বাদ কিছুটা হলেও তাতিয়ে দেবে মরগ্যানের দলকে।
 
সর্বশেষ ২০০৬ সালে হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেছিল বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। ৮ ম্যাচে অংশ নিয়ে মাত্র একটিতে জিতেছে টাইগাররা। কিন্তু ২০০৬ সালের পর জল বহু দূর গড়িয়েছে। বাংলাদেশ নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এশিয়ার 'পাওয়ার-হাউস' হিসেবে। দারুণ ব্যাটিং লাইন এবং অসাধারণ বোলিং লাইন মিলিয়ে সমীহ জাগানো দল নিয়েই ময়দানি লড়াইয়ে নামছে মাশরাফির দল।
 
জেসন রয়, অ্যালেক্স হেলস, জো রুট, এউইন মরগ্যান, জস বাটলার ও মঈন আলি- শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অন্যতম হট ফেবারিট ভাবা হয় ইংল্যান্ডকে। তবে ইংলিশ ব্যাটিং লাইন গুঁড়িয়ে দেয়ার মতো রসদ বাংলাদেশ শিবিরে রয়েছে। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান, ইনসুইংয়ে পারঙ্গম রুবেল হোসেন এবং অভিজ্ঞ মাশরাফি শুরুতেই স্বাগতিক ব্যাটিং লাইনকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়ার মতো সামর্থ্য রাখেন। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান, তরুণ তুর্কি মেহেদী হাসান মিরাজ এবং পার্টটাইম বোলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও স্পিন অ্যাটাকে পরীক্ষা নিতে সক্ষম প্রতিপক্ষের। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের জবাব রয়েছে টাইগার শিবিরে।
 
এজবাস্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা তামিম ইকবাল ভারতের বিপক্ষে বিশ্রামে ছিলেন। সব মিলিয়ে দারুণ ছন্দে রয়েছেন এই টাইগার ওপেনার। সৌম্য সরকারও রয়েছেন ছন্দে। সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমানের অফফর্ম বাংলাদেশ শিবিরকে ভাবাচ্ছে। তবে বড় ম্যাচে জ্বলে ওঠার মতো সক্ষমতা ও যোগ্যতা রয়েছে সাকিব-সাব্বিরের। বাংলাদেশের সাফল্য নির্ভর করছে টপ ও মিডঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ওপরই।
 
বাংলাদেশ শক্তিশালী একাদশ নিয়েই মাঠে নামবে। যেখানে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবদের পাঁচ-ছয় নম্বরে ব্যাটিং করতে হবে। সাত নম্বর পজিশন বরাদ্দ মোসাদ্দেক হোসেনের জন্য। ঠাণ্ডা মাথায় দায়িত্বশীল ইনিংস খেলতে যার জুড়ি নেই। তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ খেলবেন আট নম্বরে। ফলে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন নিয়েই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
 
ইংল্যান্ড আইসিসির কোনো মেজর টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি। বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনবার পরাজিত হওয়া দলটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেও দুবার হারের তেতো স্বাদ পায়। ২০১৩ সালে সর্বশেষ আসরে জিততে ভারতের বিপক্ষে জিততে জিততেও ৫ রানে হেরে যায় ইংলিশরা। সাম্প্রতিক দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে।
 
এতসব হিসাব-নিকেশ, বিচার-বিশ্লেষণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় আসরে আসলে মূল্যহীন। এখানে স্নায়ুচাপ সামলে যে খেলতে পারবে সেই দলের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। তবে ফেবারিট তকমার কারণে ইংল্যান্ডের ওপর কিছুটা চাপ থাকবে; যেটি বাংলাদেশকে কিছুটা এগিয়ে রাখবে। মোস্তাফিজ-মাশরাফিরা কি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন? গড়তে পারবেন নতুন ইতিহাস?
 
সম্ভাব্য একাদশ-
 
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহীম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
 
ইংল্যান্ড একাদশ: জেসন রয়, অ্যালেক্স হেলস, এউইন মরগ্যান (অধিনায়ক), বেন স্টোকস, জস বাটলার (উইকেটরক্ষক), মঈন আলি, আদিল রশিদ, ক্রিস ওকস, লিয়াম প্লাঙ্কেট ও মার্ক উড। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত