স্পোর্টস ডেস্ক

১৩ জুন, ২০১৫ ১৯:৫৯

আর্জেন্টাইনদের মিশন শুরু আজ

মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। যেখানে থাকে বারুদে ঝাঁঝ আর লাতিন ফুটবলের নান্দদিক ছন্দ। বিশেষ করে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো দল থাকে বলেই চার বছর পরপর কোপা আমেরিকা ফুটবল হয়ে বিশ্বফুটবলের মধ্যমনি। সঙ্গে থাকে আরেক সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। আন্ডারডগ হিসাবে চিলি-কলম্বিয়া, প্যারাগুয়েও চোখ পাকায় সমানতালে।

গত ১১ জুন থেকে মাঠে গড়িয়েছে কোপা আমেরিকা ফুটবলের ৪৪তম আসর। আয়োজক চিলি প্রথম ম্যাচেই ইকুয়েডরকে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে। তবে আসল দুই দল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত মাঠে নামেনি। তবে অপেক্ষার অবসান হবে আজ রাতেই। রাত ৩টা ৩০ মিনিটে কোপার মিশনে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ গত আসরের রানার্স আপ প্যারাগুয়ে। তবে ব্রাজিল মিশন শুরু করবে আগামীকাল থেকে। প্রথম ম্যাচে নেইমারদের প্রতিপক্ষ পেরু। আর্জেন্টিনা-প্যারাগুয়ে ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি সিক্স এইচডি ও সনি কিক্স। আজ রাত মাঠে নামছে এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ী দল উরুগুয়েও। রাত ১টায় তাদের প্রতিপক্ষ জ্যামাইকা।

বৈশ্বিক কোন ফুটবল টুর্নামেন্ট আসলেই আর্জেন্টিনা থাকে হট ফেবারিটি। তবে শেষটা হতাশা আর কান্নায়। শিরোপা আর জেতা হয় না। কোপা আমেরিকার কথাই ধরা যাক। এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১৫ বারের শিরোপা জয়ী দল উরুগুয়ে। ১৪ শিরোপা নিয়ে আর্জেন্টিনা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। অথচ এই ‍টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার শেষ শিরোপা কবে জানেন, ১৯৯৩ সালে। মজার ব্যাপার হলো, এটিই আর্জেন্টিনার এখন পর্যন্ত বড় কোন শেষ শিরোপা জেতার রেকর্ড। এরপর কেটে গেছে ২২ বছর। শিরোপার দেখা আর মেলেনি ম্যারাডোনার উত্তরসূরীদের। সেটা কোপাই হোক কিংবা বিশ্বকাপ!

অথচ গত প্রায় এক দশকে আর্জেন্টিনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে লিওনেল মেসি নামক ক্ষুদে ফুটবল জাদুকরের নাম। বার্সেলোনার হয়ে কাড়ি কাড়ি শিরোপা জিতলেও জাতীয় দলের হয়ে রিক্ত হস্তে ফিরেছেন বারবারেই। কোপায় ২০০৭ সালে ফাইনালে হার। গতবার (২০১১) দুর্দান্ত ফর্মে থেকেও আর্জেন্টিনাকে নিতে পারেননি সেমিতে।

এবার কী পারবেন মেসি, দীর্ঘদিন পর আর্জেন্টিনাকে কোন শিরোপা জেতাতে? সাম্প্রতিক ফর্ম আর ইতিহাস ভক্তদের আশা দেখাচ্ছে। গেল মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জিতেছেন মেসি। গত বছর বিশ্বকাপের ফাইনালেও দলকে তুলেছিলেন তিনি। যদিও জার্মানদের কাছে হেরে রানার্স আপ হিসাবেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের। সব মিলিয়ে গত বিশ্বকাপের ফাইনাল স্মৃতি আর গেল মৌসুমে ট্রেবল জয়ের ইতিহাস প্রেরণা যোগাচ্ছে মেসিকেও। তবে তার সঙ্গে যোগ্যতালে হাঁটতে হবে অ্যাগুয়েরো, তেভেজ, হিগুয়েন, মারিয়াদেরও। তবেই যদি কিছু একটা হয়।

শুরুটা তাই দুর্দান্ত হওয়া চাই। প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মিশন শুরু করতে প্রস্তুত মেসি শিবির। তবে কোন অঘটন না ঘটলে হেসেখেলে জেতার কথা আর্জেন্টিনার। হেড টু হেড তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ১০৩ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে ৫৮বার জিতেছে আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ের জয় ১৫টিতে। তা ছাড়া তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া আলবিসেলেস্তেদের শক্তিশালী স্কোয়াডের সামনে কি আর দাঁড়াতে পারবে দুর্বল প্যারাগুয়ে?

মেসি ফেরায় স্কোয়াডে রদবদল হতে পারে আজ। যা কোচ জেরার্ডো মার্টিনোর জন্য মধুর সমস্যাই। বলিভিয়ার বিপক্ষে ৫-০ গোলের জয় পাওয়া স্কোয়াডটা অনায়াসে রেখে দিতে পারতেন তিনি। কিন্তু ওই ম্যাচে যে খেলেননি মেসি ও হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো। আজ দুটি পরিবর্তন এমনিতেই আসছে আর্জেন্টিনা একাদশে। মেসি ফেরায় বাইরে চলে যেতে হচ্ছে লাভেজ্জিকে, আর মাশ্চেরানোর জন্য সম্ভবত জায়গা ছেড়ে দিতে হবে ফের্নান্দো গাগোকে।

দীর্ঘদিন পর দলে ফিরলেও কার্লোস তেভেজকে অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে। জুভেন্টাসে দুর্দান্ত মৌসুম পার করলেও আক্রমণভাগে মেসির সঙ্গে ডি মারিয়া ও অ্যাগুয়েরোর খেলার সম্ভাবনই বেশী। মাঝ মাঠে মাশ্চেরানোর সঙ্গে থাকছেন এভার বানেগা ও হ্যাভিয়ের পাস্তোরে। তবে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের ম্যাচে কাধে চোট পাওয়া দলের এক নম্বর গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো এই ম্যাচে খেলবেন কি না, তা নিয়ে থাকছে সংশয়।

এই ম্যাচটি আর্জেন্টিনার কোচ জেরার্ডো মার্টিনোর জন্য আবেগের। কারণ পুরোনো দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে যাচ্ছেন তিনি। ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ৫২ বছর বয়সী এই কোচ কাজ করেছেন প্যারাগুয়ের সঙ্গে। তাঁর অধীনেই প্যারাগুয়ে ইতিহাসের সেরা সাফল্য পেয়েছে। ২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও গতবারের কোপার ফাইনাল প্যারাগুয়ের এসেছিল এই মার্টিনোর হাত ধরেই।

সাম্প্রতিক ফর্ম খুবই খারাপ প্যারাগুয়ের। নতুন কোচ রামোন ডায়াসের অধীনে তিন ম্যাচের একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি প্যারাগুয়ে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে আজ তারা কি পারবে, কোন চমক দেখাতে?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত