সিলেটটুডে স্পোর্টস ডেস্ক

১৮ জুন, ২০১৫ ০৩:৫৭

ভারতকে হারিয়েই বিশ্বকাপ দুঃখ ভুলতে চায় বাংলাদেশ

আকাশে উঁকি দিচ্ছে আষাঢ়ের মেঘ; নামবে বলে বৃষ্টি! আকাশ-মাটি মেঘ-বৃষ্টির চোখ রাঙানি থাকলেও বাংলাদেশ কিংবা ভারত দুই দলই তেঁতে আছে জয় পেতে। একদল জয়ের ধারায় থাকতে আর অন্যদল দেশের মাটিতে টানা আট জয়ের পর জয়ের সংখ্যা নয়-এ নিয়ে যেতে। কাজটা সহজ নয় ভাল করেই জানেন ধোনি এবং মাশরাফি।

মেলবোর্ন থেকে ঢাকা! দুই দল সরাসরি বলতে চাইছে না বিশ্বকাপের ‘বিতর্কিত’ সে কোয়ার্টার ফাইনালের কথা। তবু ভেতরে ভেতরে আছে সেটাও। মার্চের মেলবোর্নের সঙ্গে জুনের ঢাকাকে মেলাতে নারাজ মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে এসব হয়ত আনুষ্ঠানিকতা কেবল কিন্তু আনুষ্ঠানিকতার বাইরে মাশরাফি-মুশফিকেরা প্র্যাকটিসে যেভাবে নিজেদেরকে উজাড় করে দিলেন তাতে করে বিশ্বকাপের দুঃখ ভুলতে চাইছে না তারা- এটা পরিস্কার। আর সে ম্যাচের পর যেভাবে সবাই তেঁতে ওঠেছিল সেখানে পরিস্কার ধারণাই পাওয়া গিয়েছিল পরের সাক্ষাতে হতে পারে তার ফায়সালা। পরের সাক্ষাতকাল এসে গেছে; স্বাভাবিকভাবেই সময়ও হয়ত এসে গেছে 'প্রতিশোধের'।

তবে শেষ বিচারে বৃষ্টির শঙ্কা কিংবা বিশ্বকাপ বিতর্কের রেশ না, বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজের আবহে কেবলই স্বপ্নের আবেশ। র‍্যাংকিংয়ে সেরা আটে থেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার হাতছানি বলে কথা! সে জন্য ভারতের বিপক্ষে একটি ম্যাচ জিতলে হবে হয়তো, আর সিরিজ জিতলে কথাই নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্ভাব্য সেই মাহেন্দ্রক্ষণের মাহাত্ম্য বোঝাতে মাশরাফি শুধু শুধু তো এটিকে অভিহিত করলেন না 'লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট' হিসেবে।

বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আবহ-সুর একটিই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় ক্রিকেট-কুলীনদের ওই টুর্নামেন্টে নাম লেখানোর প্রত্যয়। সম্ভাবনার প্রদীপটাকে মশালের আলোয় ভাসিয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা।

আত্মবিশ্বাসে টুইটুম্বুর মাশরাফি ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে বলে দিলেন সাফ কথা- 'ওয়ানডেতে এই মুহূর্তে যেসব দল ভালো খেলছে, সেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-ভারতের চেয়ে আমরা পরিসংখ্যানে পিছিয়ে নেই। জয়ের হিসাবে আমরা কিছু জায়গায় বরং এগিয়ে।' ভুল বলেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ থেকে ধরলে ১৫ ওয়ানডের মধ্যে ১১টিতে জিতেছে মাশরাফির দল। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার ১৬ ম্যাচে ১৩ জয়, নিউজিল্যান্ডের ২৬ ওয়ানডেতে ১৯ জয়, ভারতের ১২ ম্যাচে ৭ জয়। আত্মবিশ্বাসী তাই হবে না কেন বাংলাদেশ!

পরিসংখ্যানের পাতা বলছে ভারতের বিপক্ষে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের হাঁটি হাঁটি পা পা যুগের জয়টি ভোলার নয়। ২০০৭ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ তো এ দেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের এক ম্যাচ। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সেটি মনে করিয়ে দেন মাশরাফি। আর ২০১২ এশিয়া কাপে সেই রূপকথার অভিযানে ভারতের বিপক্ষে জয়টিও গুরুত্বপূর্ণ খুব।

খেলার এই জায়গাটাতেই বাংলাদেশের জন্য অনন্য অর্জনের হাতছানি। পরবর্তী চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নাম লিখিয়ে ক্রিকেট-আভিজাত্যে উত্তরণের সুযোগ। সে জন্য এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের আইসিসি র‍্যাংকিংয়ে থাকতে হবে শীর্ষ আটে।

এই মুহূর্তে ৮৮ রেটিং নিয়ে আটে আছে বটে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জমজমাট লড়াইয়ের শেষটা আগে থেকে অনুমানের উপায় নেই। সমান ৮৮ রেটিং নিয়েও পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় ক্যারিবিয়ানরা সাত নম্বরে। আর ৮৭ রেটিং নিয়ে পাকিস্তানিরা নয়ে। নিজেদের সেরা আটে থাকা নিশ্চিত করতে হলে ভারতের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে এবং এ মাসের শেষে আসা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ-এই ছয় খেলার দুটিতে অন্তত জিততেই হবে বাংলাদেশকে। তা সর্বশেষ সিরিজে ১৬ বছরের পাকিস্তানকে যেখানে 'বাংলাওয়াশ' করা গেছে সেখানে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের প্রত্যাশায় বাড়াবাড়ি কিছু মনে হচ্ছ না আজকাল!

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার মতো উপলক্ষকে মনে করিয়ে নিয়ে মাশরাফি বললেন- সেপ্টেম্বরের আগের ছয় ম্যাচের একেক ম্যাচ ধরে এগোনোর লক্ষ্য আমাদের। যদি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ওই আরেক ধাপে নিতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য সেটি হবে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট।'

আরও জানালেন- 'আমাদের ফাস্ট বোলাররা যেকোনো দলকে ধ্বংস করে দিতে পারে'!

মাশরাফি-রুবেল-তাসকিনের পেস এটাকে কথা অধিনায়কের কণ্ঠই ঝরল। আর একই সঙ্গে হিসেব করে দেখুন সঙ্গে সাকিব-আরাফাতের বাঁহাতি স্পিন; প্রতিপক্ষের গবেষণা আর কাঁপুনি আছ নিশ্চয়ই। সঙ্গে যোগ করুন নাসিরের অফ স্পিন, সাব্বিরের লেগ স্পিন। বৈচিত্র্যে ভরপুর পরিপূর্ণ বোলিং আক্রমণ।

ব্যাটিংয়ে তামিম-মুশফিক-সাকিব হয়তো মেরুদণ্ড। সর্বশেষ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করা সৌম্য কিংবা অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা লিটন দাশেরও সামর্থ্য আছে ভারতকে চমকে দেওয়ার। পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালভাবে ব্যাটই করতে পারেনি অধিকাংশই ব্যাটসমান, তার আগেই টপঅর্ডারের ব্যাটসম্যানেরা ম্যাচ শেষ করে দিয়েছিল।

মাঠে আজ বাংলাদশের সামনে ভারত। থাকুক যতই বিশ্বকাপ বিতর্ক; বাংলাদেশের সামনে যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তখন অপেক্ষা কেবল ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে ক্রিকেট-কৌলীন্যে উত্তরণের!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত