জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ

২৬ মে, ২০২০ ২০:৪৯

বিশ্বনাথে আসামি ধরতে গিয়ে দুই র‌্যাব সদস্য লাঞ্ছিত, বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ

সাদা পোশাকে আসামি ধরতে গিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথে লাঞ্ছিত হয়েছেন দুই র‌্যাব সদস্য। লাঞ্ছিত হওয়া দু’জনই সিলেটে র‌্যাব-৯ এর কর্মকর্তা। ঈদের আগেরদিন রোববার (২৪ মে) বিকেলে উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের পেছি খুরমা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন এ গ্রামের বাসিন্দা মারামারি মামলার আসামি ব্যবসায়ী বেলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিলেন র‌্যাব সদস্যরা।

এদিকে, এ ঘটনার সূত্ রধরে ওইদিন ব্যবসায়ী বেলাল মিয়ার বসতঘরসহ তার প্রতিবেশী আরও ৩টি বাড়ির ৪টি ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙচুরের দৃশ্য ক্যামেরাবন্ধি করায় বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি আব্দুস সালামকেও  মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে পুরো পেছি খুরমা গ্রামটি এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

র‌্যাব সদস্যদের উপর হামলা, মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় পেছি খুরমা গ্রামের ৬৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঈদের দিন সোমবার (২৫ মে) বিকেলে র‌্যাব-৯’র এসআই প্রণব রায় বাদী হয়ে ওই গ্রামের ব্যবসায়ী হাজী বেলাল মিয়াকে (৪৫) প্রধান আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় এ মামলাটি দায়ের করেছেন, (মামলা নং ১৫)। মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

পেছি খুরমা গ্রামবাসীরা জানান, প্রায় দু’মাস আগে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চুৃরির ঘটনায় সালিশ বৈঠকে পেছি খুরমার ব্যবসায়ী হাজী বেলাল মিয়া ও তার প্রতিপক্ষ একই গ্রামের রফিক মিয়ার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। গত ২০ মে বেলাল ও রফিক মিয়া পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে।

এর একদিন পর গত শুক্রবার (২২ মে) হাজী বেলাল মিয়াসহ ১৩ জনকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তার প্রতিপক্ষ রফিক মিয়া (মামলা নং ১৪)।

মামলার একদিন পর রোববার (২৪ মে) সাদা পোশাকে দুই র‌্যাব সদস্য হাজী বেলাল মিয়াকে ধরতে তার বাড়িতে যান। এসময় গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে বেলাল মিয়া তার বাড়িতে গরু জবাই করছিলেন।

বিজ্ঞাপন



বেলাল মিয়া বলেন, সাদা পোশাকে হেলমেট পরা থাকায় মোটর সাইকেলে করে আসা র‌্যাব সদস্যদের আমরা প্রতিপক্ষের লোক মনে করেছিলাম। এসময় আমার বাড়িতে থাকা গ্রামের লোকজন তাদের ধাওয়া করে। এতে র‌্যাব সদস্যের একজন অস্ত্র পানিতে ফেলে ওয়ারলেস উঁচিয়ে নিজেকে আইনের লোক বলে পরিচয় দেন।

এদিকে লাঞ্ছিত হওয়া র‌্যাব সদস্যদের ফোন পেয়ে র‌্যাব-৯ এর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় খাল থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেন।

বেলাল মিয়ার পরিবারের লোকদের অভিযোগ, এসময় সাদা পোশাকে হেলমেট পরে ৪/৫জন বেলাল মিয়ার ঘরের আসবাবপত্র, ২টি মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন ও মালামাল লুট করেন। একই সময়ে বেলাল মিয়ার পাশের ঘর ও প্রতিবেশিদের ঘরের আসববপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ভাঙচুরের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করায় সাংবাদিক আব্দুস সালামকে মারধর করা হয়।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী হাজী বেলাল মিয়ার স্ত্রী আম্বিয়া বেগম (৩৫) বলেন, তাদের ঘরসহ ৩ বাড়ির আরও ৩টি ঘর ভাঙচুর করা হয়। আর হেলমেট পরা ভাঙচুরকারীরা তাদের স্টিল আলমিরা থেকে ২/৩ ভরি স্বর্ণ ও ৩ হাজার নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বেলাল মিয়ার পাশের বাড়ির লিলু মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৬০) বলেন, ঘরে ভাঙচুরের পাশাপাশি তার ঘরে থাকা নগদ ১ লাখ টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে হেলমেট পরা অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন।

সাংবাদিক আব্দুস সালাম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খালের পানিতে ভিজে গ্রামের লোকজন র‌্যাব সদস্যদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র খোঁজ করছেন। এসময় ছবি তুলতেই আমাকে মারধর শুরু করেন এবং ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেন র‌্যাব-সদস্যরা। ঘন্টাখানেক পর র‌্যাবের এক এএসপি ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন রিসেট দিয়ে ফিরিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াজ আলী বলেন, বেলাল মিয়ার বিরুদ্ধে তার প্রতিপক্ষ রফিক মিয়া থানায় মামলা দেওয়ার পর থকে হেলমেট পরে মহড়া দেওয়া শুরু হয়। এ বিষয়টি বেলাল আমাকে জানিয়েছিলেন। আর ঘটনারদিন সাদা-পোশাকে ও হেলমেট পরা থাকায় এ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। পরে র‌্যাব-কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বেলাল মিয়ার বাড়ির পাশের খাল থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাবের লাঞ্ছিত হওয়া দুই সদস্যকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অলংকারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল বলেন, দুই র‌্যাব সদস্য আসামি ধরতে গিয়ে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি জেনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যারা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৩বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে র‌্যাব ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-৯’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে ওইদিন র‌্যাবের দুই সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এসময় বেলাল মিয়ার নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করেন গ্রামবাসী। তাই সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি জানান, ওইদিন ঘটনাস্থলে তিনি নিজে ছিলেন এবং আসামির বসতঘর কিংবা অন্য কারো ঘর কিংবা আসবাববপত্র ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। আর ঘটনাস্থলে অস্ত্র ফেলা বা উদ্ধারের কোন ঘটনাও ওইদিন ঘটেনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত