হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

২৭ মে, ২০২০ ১৫:০৭

করোনাকালে সংকটে পড়াদের পাশে ‘আলোর বাহন’

দেশে তখন করোনা ধরা পড়েছে একমাস হয়েছে, সরকার ঘোষিত প্রথম ধাপের সাধারণ ছুটির পার হয়েছে ১৫ দিন। সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন বা যাদেরকে নিম্নবিত্ত বলা হয় তারা ততদিনে পরে গেলেন অর্থনৈতিক ও খাদ্যের সংকটে। ঠিক সেই মুহূর্তে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের সবুজবাগ ও দেববাড়ী সড়কের ২৪ জন তরুণ ও তাদের একজন প্রবাসী বন্ধু মিলে শুরু করলেন একটি সামাজিক সংগঠন ‘আলোর বাহন’।

১১ এপ্রিল যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি ইতিমধ্যে উপহার স্বরূপ ১৭০ জন মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি ত্রাণ সামগ্রী ৷ আলোর বাহন খুঁজে খুঁজে অস্বচ্ছল মানুষ, সংকটে পড়া মধ্যবিত্তদের এবং যারা লজ্জায় ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারে না তাদেরকে চিহ্নিত করে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নজনের পোস্ট দেখেও সংগঠনটি সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে। সংকটে পড়া নৃত্যশিল্পী, পরিবহন শ্রমিক,চাকরীচ্যুত মধ্যবিত্তের পাশাপাশি যারা এবারের ঈদ পালনের সক্ষমতা হারিয়েছেন তাদেরকেও খুঁজে খুঁজে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে সংগঠনটি।

সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা শুভ্র অধিকারী সিলেটটুডে কে বলেন,আমরা সবুজ বাগ আর দেববাড়ীর ২৪ জন বন্ধুসহ আমেরিকার এক বন্ধু মোট ২৫ জন মিলে এই সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন আমাদের আমেরিকান বন্ধু লিটন দাশ, তার পর লিটন দাশ সহ ২৫ জনের হাত ধরে সংগঠনের কাজ চলছে। আমাদের সংগঠনের অর্থের যোগান হয় ২৫ জন বন্ধুর ব্যক্তিগত তহবিল এবং আমেরিকার বন্ধুসহ আরও কিছু আমেরিকান ও অন্যান্য দেশে বসবাসকারী কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে।

এদিকে এই সংগঠনটির এর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নজর কেড়েছে শ্রীমঙ্গলের সর্বমহলের। স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মী ও নাগরদোলা থিয়েটারের সম্পাদক শিমুল তরফদার জানান, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুকে পোস্ট করেন নৃত্যশিল্পীরা অসহায় অবস্থায় আছেন সেই পোস্ট দেখার সাথে সাথেই আলোর বাহনের কর্মীরা সেইসব নৃত্যশিল্পীদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের কাছে উপহার সামগ্রী অতি দ্রুততার সাথে পৌঁছে দিয়েছেন যা প্রশংসার দাবী রাখে।

বিজ্ঞাপন

আলোর বাহন থেকে উপকারভোগী একজন পরিবহন শ্রমিক সিলেটটুডেকে বলেন, আমাদের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় খুব কষ্ট করে চলতে হচ্ছিলো, আমি একজনের মাধ্যমে এই সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমার ঠিকানায় চাল, ডাল, তেল, আলু এসব পণ্য পৌঁছে দিয়েছে এবং ছবি তোলার জন্য তারা কোন ধরনের পীড়াপীড়িও করেনি।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী এসকে সুমন বলেন, আসলে এখন ত্রাণ দেওয়াটা অনেকটা শো-অফে পরিণত হয়েছে কিন্তু এই আলোর বাহন সংগঠনটি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তারা সেইসব মানুষকেই খুঁজে খুঁজে উপহার সামগ্রী পৌঁছচ্ছেন যাদের আসলেই এটি খুব প্রয়োজন। এই শুভ উদ্যোগটি যারা গ্রহণ করেছেন তাদের সবাইকে সাধুবাদ জানাই।

সংগঠনের আরেক সদস্য বিমল দাশ বলেন, করোনার সময়কালে আমরা ত্রাণ ও চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থও প্রদান করেছি। করোনা পরবর্তী সময়ে আমরা ২৫ জনসহ প্রবাসী বন্ধু মিলে সংগঠনের অর্থ যোগান দিবো। আর অসহায় মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করবো। যেমন খাবার যোগান, চিকিৎসা খাতে, গরিব মেয়েদের বিবাহ কাজে আমরা এসব অর্থ ব্যয় করবো।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে গঠিত এমন সংগঠনটির কর্মকাণ্ড আসলে প্রশংসার দাবীদার। আলোর বাহন সংগঠনটির তাদের এই ভালো কাজ অব্যাহত রাখার জন্য আমরা সহযোগিতা করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত