চুনারুঘাট প্রতিনিধি

১৮ জুন, ২০২০ ১৩:২৩

ভালো নেই চুনারুঘাটের মৃৎশিল্পীরা

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে দুটি গ্রামের প্রায় ২৫টি মৃৎশিল্পী পরিবার কষ্টে জীবনযাপন করছে। উপজেলার সাঁটিয়াজুরী ইউপির কাজিরখিল ও খনকারিগাঁও গ্রামের কুমারপাল পাড়া সহজেই যে কারোর মনকে পুলকিত করে তুলে। মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা পাল বংশের লোকদের টিকে থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে।

এক সময় এ গ্রামগুলিতে মৃৎশিল্পের জৌলুস ছিল। এ শিল্পে জড়িয়ে ছিল অনেক পরিবার। হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার অনেক কষ্টে তাদের পূর্বপুরুষদের এ পেশা ধরে রেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গেছে এ মাটির কাজ। তাই এই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, মাটির তৈরি বাসন, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুল তৈরিতে মাটি ও পোড়ানো বাবদ প্রায় ৫ টাকা খরচ হলেও তা বাজারে বিক্রি হয় ১০ টাকায়। এর মধ্যেই রয়েছে শ্রম ও মাল বহনের খরচ। ফলে লাভের মুখ তারা দেখেন না। অথচ ওই একটি খোলা এক হাত ঘুরে বাজারে খুচরা ক্রেতা কিনছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ফলে সহজেই অনুমেয় মূল মুনাফা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে।

ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মৃৎশিল্পীরা এ পেশার প্রতি হতাশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান প্রজন্ম এ ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।

মৃৎশিল্পের নিপুণ কারিগরেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অনেকটা অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক পুরুষ এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগের মত দামে বিক্রি করতে পারছেন না। মাটির এ সকল পাত্রের চাহিদাও আগের মত নেই।

মৃৎশিল্পী গৌপেন্দ্র পাল জানান, লাভ-ক্ষতির চিন্তা করি না। বাপ-দাদার কাজ ছাড়ি কি করে। করোনার আমাদের সকল কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন অসহায় জীবনযাপন করছি।

তিনি আরও বলেন, পূর্বপুরুষের পেশা বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে করোনায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।

মৃৎশিল্পী মনিন্দ্র রুদ্র পাল, মিনতি রুদ্র পালসহ বেশ কয়েকজন জানান, মাটির তৈরি বাসন, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুলসহ মাটির তৈরি পণ্য তৈরিতে মাটি সংগ্রহ করতে অনেক খরচ করতে হয়। এছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুণতে হচ্ছে। তার মধ্যে আবার করোনার প্রভাব পড়েছে এখন কাজকর্ম সব বন্ধ। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।

এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিত রায় দাশ রায় জানান, এক কালের ঐতিহ্যের মাটির তৈরি বাসন, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুল এখন হাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এসব মাটির তৈরি পণ্য ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

আমরা উপজেলার মৃৎশিল্পীদের নিকট থেকে মাটির তৈরি কলস ক্রয় করে উপজেলার বিভিন্ন বনায়নে পাখিদের আবাসন হিসেবে গাছে গাছে কলস বেধে দিবো বলেও তিনি জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত