নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জুন, ২০২০ ২০:২৫

সিলেটে করোনা মোকাবেলার উদ্যোগ নিয়ে ক্ষোভ, তিন দাবিতে স্মারকলিপি

সিলেটে বাড়ছে করোনা রোগী। সিলেট জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে প্রায় দুই হাজার। উপসর্গ নিয়েও মারা যাচ্ছেন অনেকে। অথচ এখানে একমাত্র একশ' শয্যার শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করছে। ফলে অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না হাসপাতালে।

এদিকে, দিন দিন আক্রান্ত ও মৃতের হার বাড়লেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না কঠোর কোন ব্যবস্থা। স্থাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সিলেটে করোনার বিস্তার ঠেকাতে কার্যত কোন উদ্যোগই নেয়া হচ্ছে না।

দেশের চিহ্নিত রেড জোন জেলা হলেও সিলেটে লকডাউন বা জনসাধারণের বেপরোয়া চলাচল রোধে কোন উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। এমতাবস্থায় করোনার আগ্রাসণ থেকে সিলেটবাসীকে রক্ষায় তিন দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপিটি প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন। স্মারকলিপিতে বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের ২৮ জন প্রতিনিধি স্বাক্ষর করেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কঠোর হুশিয়ারির পর সিলেটের বেসরকারি কিছু হাসপাতাল কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করেছে। স্মারকলিপিতে সিলেটে করোনা আক্রান্তদের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়, গত মে মাস পর্যন্ত সিলেটে আক্রান্ত ছিলেন ৫৫৫ জন ও মারা যান ১৪ জন। আর চলতি জুন মাসের ২০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার। এই ২০ দিনে মারা যান ৩১ জন। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছ সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সংক্রমণ ঠেকাতে জনসাধারণের বেপরোয়া চলাচল ঠেকাতে এখই লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।

বিজ্ঞাপন



করোনা পরীক্ষার ভোগান্তির কথা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করে বলা হয়, সীমিত জনবল নিয়ে শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাবে প্রতিদিন চার সেটে ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা রাখছে। কিন্তু শাবির চেয়ে চারগুণ জনবল নিয়েও ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে মাত্র ১৮৮টি নমুনা। ফলে কয়েক দিন পরপর নমুনা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। এতে রিপোর্ট পেতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগছে। এতে আক্রান্তদের দ্বারা সুস্থরা সংক্রমিত হচ্ছেন। তাই স্মারকলিপিতে ওসমানীর ল্যাবে প্রতিদিন নূন্যতম ৪ সেট অর্থাৎ ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি নতুন পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সিলেটে এখনো করোনা চিকিৎসায় একমাত্র সরকারি হাসপাতাল ‘শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল’র উপর সিলেটবাসীকে নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু এই হাসপাতালে এখন আর সিট খালি নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চেষ্টায় হাসপাতালে ভেন্টিলেশনসহ ১৪টি আইসিইউ বেড স্থাপন করায় করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিদিন রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনার চিকিৎসায় নতুন হাসপাতাল চালুর পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবীর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাক শাহ্ দিদার আলম নবেল, ইমজা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর, খেলাঘর সিলেটের সহ সভাপতি অরূপ শ্যাম বাপ্পী।

বিজ্ঞাপন



স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন (জেষ্ঠ্যতা নয় স্বাক্ষরের ক্রম অনুসারে) সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আফজাল রশিদ চৌধুরী, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিলেট স্টেশন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সভাপতি ভবতোষ রায় বর্মন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট  বেদানন্দ ভট্টাচার্য, দৈনিক সিলেট মিরর’র সম্পাদক ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর, পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান’র সংগঠক আশরাফুল কবীর, সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সনাক সিলেটের সভাপতি, আজিজ আহমদ সেলিম, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম, খেলাঘর সিলেটের সহ সভাপতি অরূপ শ্যাম বাপ্পী, সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ, সিলেট জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মো. সিকন্দর আলী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, গণতন্ত্রী পার্টির সাবেক সভাপতি মো. আরশ আলী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ দিদার আলম নবেল, ইমজা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম ভাস্কর রঞ্জন দাশ, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল হক সেলিম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত