নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুন, ২০২০ ০০:৩২

‘তারবিহীন’ নগরে বিদ্যুতের খুঁটি কেন?

সিলেটের চৌহাট্টা-বন্দরবাজার সড়ক

২০১৭ সালে সিলেট নগরীতে শুরু হয় ‘ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্প’। দেশের মধ্যে সিলেটেই প্রথম মাটির নিচ নিয়ে বিদ্যুতের লাইন টেনে নেওয়ার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম অবস্থায় নগরীর ৭ কিলোমিটার এলাকায় কাজ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। তবে শেষ সময়ে এসে এই প্রকল্পের সুফল নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।

প্রকল্পের শুরুতে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরী হবে তারবিহীন। সড়কের উপরে ঝুলে থাকবে না বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন পরিসেবার তারের জঞ্জাল। ফলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে নগরীর। আর ঝড়বৃষ্টিতে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেবে না।

তবে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার টেনে নেওয়ার পর এখন আবার সড়কের মাঝখানে বড় বড় খুঁটি বসাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এসব খুঁটিতে টানা হচ্ছে বিদ্যুতের তার। গত চার দিন ধরে নগরীর ব্যস্ততম চৌহাট্টা-বন্দরবাজার সড়কে খুঁটি বসানো ও তার টানার কাজ চলছে। ‘তারবিহীন নগরী’ গড়ার কথা বলে ফের সড়কের উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার টানা নিয়ে নগরীর বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু দেশে প্রথম এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তাই কোনো কারিগরি ত্রুটি থাকতে পারে। এই জন্য ঝুঁকি এড়াতে মাটির নিচ দিয়ে তার টানার পাশাপাশি খুঁটি বসিয়ে উপর দিয়েও তার টানা হচ্ছে। মাটির নিচের লাইনে কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে উপরের লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন অব্যাহত রাখা হবে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল মুমিন বলেন, তারবিহীন নগরী গড়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য গত এক বছরের বেশি সময় ধরে নগরীর প্রায় সব রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়। বর্ষাকালে নগরীর সবাইকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সুফলের কথা ভেবে আমরা তা মেনে নেই। কিন্তু এখন যদি আবার সড়কের উপরে তারের জঞ্জাল ঝুলে থাকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কি লাভ হলো? সরকারি টাকারও অপচয় করা হলো কেন?

সিলেট সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরীর সড়কজুড়ে বৈদ্যুতিক তারের প্যাচগোছ; বিদ্যুতের সাথে টেলিফোন, স্যাটেলাইট, ইন্টারনেটের তার মিলিয়ে রীতিমত জঞ্জাল পাকিয়ে ছিলো নগরীর সড়কগুলোর উপরে। এতে নগরীর সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি সামান্য ঝড়বৃষ্টিতে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে নগরী। এই দুর্ভোগ লাগবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে নগরীতে শুরু হয় ভূ-গর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নির্মাণ কাজ। এতে সহায়তা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। বিদ্যুতের সাথে অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ক্যাবল তারও মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে সিলেটের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৮শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাশ হয়। ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয় এই প্রকল্পের কাজ। ওই প্রকল্পের অধীনেই ভূ-গর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইন টানা হচ্ছে।

সিলেটের শাহজালাল (র.) দরগাহ এলাকার এক কিলোমিটার সড়কে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তারবিহীন সেই সড়কের ছবি দেশেবিদেশে বেশ প্রশংসিতও হয়।

এরপর এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার বিদ্যুৎ সাব স্টেশন কেন্দ্র থেকে আম্বরখানা হয়ে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার-সার্কিট হাউজ সড়ক ও রিকাবীবাজার হয়ে ওসমানী হাসপাতাল পর্যন্ত ভ’-গর্ভস্থ লাইন টানা হয়। কিন্তু মাটির নিচ দিয়ে তার টেনে নেওয়ার পর এবার সড়কের মাঝখানে খুঁটি বসিয়ে আবার উপর দিয়ে তার টানা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, সারাদেশের মধ্যে সিলেটে প্রথম ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের কাজ চলছে। এজন্য যেকোনো সময় কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। মাটির নিচের লাইনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান করতে অনেকটা সময় লাগবে। কিন্তু চৌহাট্টা-বন্দরবাজার সড়ক সিলেটের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা। নগরীর প্রাণকেন্দ্র ধরা হয় এই এলাকাকে। এই এলাকায় দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকলে সমস্যা হবে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমরা আপাতত মাটির উপর দিয়েও বিদ্যুতের লাইন টানছি।

আগে নগরীর সড়কের পাশে ছিলো বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন। এবার ঠিক সড়কের মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়ে লাইন টানা হচ্ছে। এতে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নামে আরও সৌন্দর্যহানির শঙ্কা প্রকাশ করছেন নগরবাসী।

তবে এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রুহুল আলম বলেন, এই তার সাময়িক সময়ের জন্য টানা হচ্ছে। ছয়-সাত মাস পর যদি দেখা যায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইন ভালোভাবে কাজ করছে তখন মাটির উপরের খুঁটি ও তার সরিয়ে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, খুঁটি মাঝখানে বসানো হয়েছে কারণ ডিভাইডার (সড়ক বিভাজক) নির্মাণ করে এই খুঁটির চারপাশে গাছ লাগানো হবে। ফলে সৌন্দর্যহানি হবে না। এছাড়া এসব খুঁটিতে সড়কবাতিও লাগানো হবে।

সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়ে লাইন টানা হলে তাতে ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটসহ অন্যান্য বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানও নিজেদের তার টেনে পুরনো জঞ্জাল আবার ফিরে আসবে বলেও শঙ্কা নগরবাসীর।

তবে এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শুক্রবারের মধ্যে তাদের ক্যাবল সরিয়ে নেওয়ার জন্য। অন্যথায় শনিবার থেকে আমরা এগুলো অপসারণ শুরু করবো। সড়কের উপর দিয়ে ক্যাবল টেনে নগরীতে আর কেউ ব্যবসা করতে পারবেন না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত