দেবকল্যাণ ধর বাপন

২৭ জুন, ২০২০ ২২:০৬

বেড়েই চলছে নদীর পানি, সিলেটে বন্যার শঙ্কা

ফাইল ছবি

টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদ-নদিতে পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা ও সারি নদীতে পানি বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বাড়ার ফলে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আগামী মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এদিকে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বন্যার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা ও অঞ্চলজুড়ে।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেষ্ঠ্য অবহাওয়াবিদ মো. সাঈদ আহমদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে জানান, সিলেটে অঞ্চলসহ বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই প্রতিদিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জের ছাতক, মৌলভীবাজারের জুড়ি ও হবিগঞ্জের মাধবপুরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হবে। এ ছাড়া সিলেট সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয়ে এরচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বন্যার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, শনিবার (২৭ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে আগামী ৭ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হবে জেলার গোয়াইঘাট উপজেলায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী উপজেলায় আগাম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৬৮ মিলিমিটার এবং সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে আগামী ১০ দিনে বৃষ্টি হবে ১৪৪ মিলিমিটার। এদিকে বিভাগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে হাওর অধ্যুষিত অঞ্চল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায়। এখানে আগামী ১০ দিনে সর্বোচ্চ ৪৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত্ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে এ জেলায় সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শাল্লায় ২৪৮ মিলিমিটার। এছাড়া আগামী ১০ দিনে বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪৩৬ মিলিমিটার ও সর্বনিম্ন সদর উপজেলায় ১৫৪ মিলিমিটার এবং মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪৩২ মিলিমিটার ও জেলার সর্বনিম্ন রাজনগরে ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন



এদিকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সিলেটে বন্যার আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) কর্মকর্তারা। পাউবো সিলেট অফিস জানায়, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা ও সারী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত সিলেটের সবকটি উপজেলায় সকল নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে না গেলেও এর কাছাকাছি অবস্থায় প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি, লোভাছড়ায় লোভা নদীর পানি ও কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহম্মদ শহীদুজ্জামান সরকার জানান, অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের সবকটি নদীতে পানি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় সিলেট অঞ্চলের কয়েকটি উপজেলায় বন্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপদসীমার দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টের পানি বিপদসীমার দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৪ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ৭ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ১২ দিশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ ৯ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ, শেরপুর ও শেওলা এই তিন পয়েন্টে বিপদসীমা যথাক্রমে ১৫.৪০, ৮.৫৫ ও ১৩.০৫ সেন্টিমিটার। এদিকে সুরমা নদীর সিলেট ১০ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ১০.৮০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে লোভা নদীর পানিও।

এ দিকে শনিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত