শোয়েব উদ্দিন, জৈন্তাপুর

৩০ জুন, ২০২০ ১৮:১৬

জৈন্তাপুরে ভারি বর্ষণে মৎস্যচাষিদের স্বপ্নভঙ্গ

অবিরাম ভারি বর্ষণে ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুর উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলায় এখনো বন্যার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সারী ও করিচ নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার ৫ ইউনিয়নে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে হাজারও মৎস্যচাষির স্বপ্ন।

গত কয়েক দিন সারী ও করিচ নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। এতে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায় তার মধ্যে ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু ভাটপাড়া, মাঝপাড়া, দত্তপাড়া, হাউদপাড়া, জুহাইরটুল, বালিপাড়া, পাখিটিকি, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের বাহুরভাগ উত্তর, বাহুরভাগ দক্ষিণ, নিজপাট ইউনিয়নের ডিবির হাওর, কেন্দ্রী হাওর সহ চারিকাটা ও দরবস্ত ইউনিয়নের বেশ কিছু সংখ্যক দিঘী পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে বাড়িঘর। ভেসে যায় মৎস্য খামারের পাশাপাশি অসংখ্য পুকুর।

উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মাজপাড়া গ্রামের ফারুক আহমদ বলেন, আমি একজন মৎস্যচাষি। তিন দিনের ভারি বর্ষণে আমার  ৪২ বিঘা জমির মাছ পানির সাথে ভেসে যায়। আমার মৎস্যচাষে দৈনিক ১৫ জন মানুষ কাজ করে।আমি একটু সচেতন থাকায় আমার বেশি ক্ষতি হয় নি।আমার প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

ফতেপুর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের নাছির উদ্দিন বলেন, অভাব অনটনের মাঝেও ঋণ করে গড়ে তুলেছিলেন একটি মৎস্য খামার। খামারটি নিয়ে নানা স্বপ্ন ছিল তার। একদিন মাছ বিক্রি করে সংসারের অভাব দ‚র করবেন। কিন্তু কে জানতো তিন দিনের অবিরাম ভারি বর্ষণে ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে ভেসে যাবে তার সেই স্বপ্ন। আকস্মিক বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তার খামারটি। জাল দিয়ে ঘিরেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। পানির সঙ্গে ভেসে গেছে প্রায় ৩ লাখ টাকার মাছ। এখন তিনি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নিজপাট ইউনিয়নের দেলওয়ার হোসেন বলেন, আমি ২৬ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছি। তিন দিনে এতো বড় বন্যা হবে তা কল্পনার মধ্যেও ছিল না খামার ভেসে যাবে। কিছুদিন পরে মাছ তুলে বিক্রি করা হতো। তার পরে বন্যা আসলে তেমন ক্ষতি হতো না। খামারের চার দিকে জাল দিয়ে ঘিরে শেষ সম্বলটুকু রক্ষার চেষ্টা করেছি। কিন্তু রক্ষা করতে পারিনি।আমার ২০লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।  এখন আমি নিঃস্ব।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় স‚ত্রে জানা যায়, উপজেলার গ্রাম ও হাওর সহ মোট ৩২৬৪টি পুকুর ও দিঘী রয়েছে। ৫১৪.১৫ হেক্টর আয়তনের এসব পুকুরে ১২শত চাষি মৎস্য চাষ করেন। প্রতিবছর প্রায় ২৫শত মেট্রিকটন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপন্ন হয়।

জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত চাষি আরিফ উদ্দিন বলেন, গত বন্যায় খামার ভেসে গিয়েছিল। ঋণ করে আবারও চাষ করেছি। এবারও সর্বস্বান্ত হলাম। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের ক্ষতিপূরণ‚রণ দেওয়া হয় না। তাই আমরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারি না।

জৈন্তাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মাসুদ রানা বলেন, বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, মৎস্যচাষিরা আমাদের সম্পদ। উনাদের বিপদে সরকারও পাশে থাকতে চায়।আমাদের কাছে এখনও কিছু আসেনি যদি আসে অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত