দেবকল্যাণ ধর বাপন

০২ জুলাই, ২০২০ ২৩:১১

১১ বছরে প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকার প্রকল্প, তবু কেন জলাবদ্ধতা?

ছবি : ফেসবুক

গত ১১ বছরে সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, ছড়া উদ্ধার ও সংস্কারে নেওয়া হয় প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এতো প্রকল্প সত্ত্বেও জলাবদ্ধতার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী।

সর্বশেষ গত বুধবার (১ জুলাই) রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরীর অনেক এলাকায়। বাসা-বাড়িতেও ঢুকে পড়ে বৃষ্টির পানি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

ছাড়া উদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিরসনে এতো এতো প্রকল্প সত্ত্বেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি না মেলায় প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একইসঙ্গে নগরীর অপরিকল্পিত উন্নয়নকেও দায়ী করেছেন অনেকে।

সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে সুরমা নদী ছাড়াও প্রবাহিত হয়েছে ছোট বড় ১৪টি ছড়া ও খাল। মূলত প্রভাবশালীরা ছড়া ও খালগুলো দখল করে রাখায় বর্ষা মৌসুমে লেগে থাকে জলাবদ্ধতা।

৭২ কিলোমিটারের এসব ছড়া খাল উদ্ধার, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যে গত ১১ বছরে নেওয়া হয় তিনটি প্রকল্প। ২০০৯ সালে নগরীর ছড়াগুলো উদ্ধারে ১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর ২০১৩ সালে একই লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় ২০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প। এরপর ২০১৬ সালে নেওয়া হয় ২৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রকল্প। এরমধ্যে এই তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। গত ডিসেম্বরে অনুমোদন মিলেছে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকার একটি মেঘা প্রকল্প। 


ছবি : ফেসবুক

ছবি : ফেসবুক

এতো প্রকল্প সত্ত্বেও জলবদ্ধতার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এরমধ্যে বুধবার রাতের বৃষ্টিতে নগরীর মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, কানিশাইল, উপশহর, তেররতন, সুবিদবাজার, জামতলা, তালতলা এলাকাসসহ নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা যায়। একইসাথে এসকল এলাকার বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। সড়কে পানি জমে যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।

বিজ্ঞাপন



বুধবারের বৃষ্টিতে বাসায় পানি ঢুকে পড়ে নগরীর লামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও দৈনিক প্রথম আলো’র সিলেট অফিসের ফটো সাংবাদিক আনিস মাহমুদ। বাসায় পানি ঢুকে পড়ার কিছু ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন- “নগরবাসী খুব ভালো আছি! আধো আধো ঘুমে নাকে পঁচা পানির গন্ধ। ভাবলাম বাসার সামনে নর্দমার সংস্কার কাজ চলছে তারই গন্ধ! লাইট জ্বালাইয়া দেখি রুমের চারদিকে পায়ের ঘণ্টা সমান পানি! তা থেকেই গন্ধের সৃষ্টি! বাসা নিচু হওয়ায় বর্ষায় এমন ঘটনা ঘটে। তবে এতো কম সময়ে হাঁটু পানি বেমানান। জানলাম, নর্দমার মুখে সিটির 'নর্দমা প্রকৌশলীরা' ঢিপা দিয়ে রেখেছেন! নর্দমা পানি গিলছেই না, উল্টো বমি করছে! -অসময়ের উন্নয়নে,ঘুম আসে না দুই নয়নে।”

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সকালে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেটটুডেটোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি জমে গেছে। আর আমার বাসায় হাঁটুপানি। বৃষ্টি  হলেই এই এলাকায় পানি উঠে, তবে গতকাল এতোকুটু বৃষ্টি হয়নি যে বাড়িরে পানি ঢুকে যাবে। রাতে এলাকার শতশত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।’

এ সময় তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অসময়ে ও অপরিকল্পিতভাবে সিসিকের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।’ 

বিজ্ঞাপন



একইরাতে নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ডের জামতলার বাসিন্দা ও দৈনিক শুভ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক মবরুর আহমদ সাজু ফেসবুকে তার ওয়ালে লিখেন, “এবার আমি নিজেই সংবাদ.? কি আর বলব কিছুই বলতে পারছি না। গভীর রাত দেড়টায় ঘুম না ভাঙলে হয়ত বাসার সবাই পানির উপরে ভেসে ভেসে সুরমা নদীতে চলে যেতাম! ১৩ নম্বর ওয়ার্ডস্থ জামতলার অনেক বাসা বাড়িতে রাতের বৃষ্টিতে বাসা বাড়িতে হাটু পানি লাগে..”

দৈনিক সিলেটের ডাকের নিজস্ব প্রতিবেদক এএইচ আরিফ ফেসবুকে লিখেন, “রাতের আঁধারে ডুবলো সিলেট!”

এ ব্যাপারে তার সাথে কথা হলে তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টির পর বুধবার রাতে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে। নগরীর নিচু এলাকাগুলো বাসিন্দার বেশি ভুক্তভোগী।’  নদীর পানি বৃদ্ধি ও পাহাড়ীঢলও জলাবদ্ধতার অন্যতম একটি কারণ বলেও জানান তিনি।

জলাবদ্ধতা নিরসনে এতো প্রকল্পের বাস্তবায়ন সত্ত্বেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে কারণ জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, সিলেট নগরীর কিছু কিছু নিচু এলাকা প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি। নগরবাসীর এই দুর্ভোগ লাগবে সিসিক বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। প্রতিটি এলাকায় গভীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন খাল ও ছড়া উদ্ধার করে সেগুলোকে পরিষ্কার করে পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সিসিক কাজ করে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত