দেবকল্যাণ ধর বাপন

১৩ জুলাই, ২০২০ ০০:১৮

ফের জলমগ্ন নগরী, ভোগান্তি চরমে

ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের ফলে ফের তলিয়ে গেছে সিলেট নগরীর নিচু এলাকা। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পানি পর্যন্ত জমে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটের নগরবাসী। নগরবাসীর অভিযোগ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন ও সড়ক সংস্কারের কাজ চলায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

আর নগর কর্তৃপক্ষ বলছেন সময় মতো নদী খনন না করায় অল্প বৃষ্টিতেই নদীর পানি উপচে নগরীরতে প্রবেশ করে। এতে বর্ষা মৌসুমে নগরীর বাসিন্দাদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগের মধ্যে।

শনিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয় নগরীতে। যা রোববার দিনভর অব্যাহত ছিলো। সন্ধ্যার পরও বৃষ্টি হয়েছে খানিকটা। বৃষ্টিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়কে লন্ডনিরোড থেকে পাঠানটুলা এলাকা পর্যন্ত জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পানিতে ডুবে যায় সড়ক। এছাড়াও সিলেট নগরীর নয়াসড়ক, ছড়ারপাড়, পুরানলেন, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, ভাতালিয়া, জামতলা, তালতলা, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার উপশহরসহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া নগরীর সুবিদবাজার, বনকলাপাড়া, হাউজিং এস্টেট, জালালাবাদ, লোহারপাড়া, বাগবাড়ি, কুয়ারপার, চারাদিঘীরপাড়, হাওয়াপাড়া, বারুতখানা, সোবহানীঘাট, কলবাখানি, কুয়ারপাড়, কাজলশাহ, পাঠানটুলা, খোজারখলা, ভার্থখলা, মেনিখলা, বারখলা, পাঠানপাড়াসহ নগরীর অন্তত ৫০টি এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৯৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট অফিস।

বিজ্ঞাপন



জামতলা এলাকার বাসিন্দা পিনাক রায় সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি জমে গেছে। আর বাসায় হাঁটুপানি। বৃষ্টি  হলেই এই এলাকায় পানি উঠে, তবে রোববার এতোকুটু বৃষ্টি হয়নি যে বাড়িরে পানি ঢুকে যাবে। রাতে এলাকার শতশত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।’

এ সময় তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অসময়ে ও অপরিকল্পিতভাবে সিসিকের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। আর প্রতি বর্ষাতেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে।’

সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে সুরমা নদী ছাড়াও প্রবাহিত হয়েছে ছোট বড় ১৪টি ছড়া ও খাল। মূলত প্রভাবশালীরা ছড়া ও খালগুলো দখল করে রাখায় বর্ষা মৌসুমে লেগে থাকে জলাবদ্ধতা।

নগরীর লামাপাড়া এলাকার জাফর সিদ্দিক চৌধুরী নামের এক বাসিন্দা বলেন, ছড়া উদ্ধার বা জলাবদ্ধতা নিরসনে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিবছরই কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তা মানুষের কোনো কাজে আসে না। পুরো বর্ষা মৌসুমই জলাবদ্ধতার অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হয়েছে। তার উপর ফের জলাবদ্ধতা।

তবে ছড়া বা ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা এটা মানতে নারাজ সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সিলেট নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের সবকটি এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। পুরনো ড্রেনগুলোকে ভেঙে পানির সহজ নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ড্রেনগুলোর গভীরতা ও পাশে বড় করে তৈরি করেছে সিসিক। এছাড়া নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা সবকটি ছড়া উদ্ধার করে তা দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই  ছড়া বা ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা হওয়ার মতো কোন কারণ নেই।

তবে সিলেটে নদনদীর পানি বৃদ্ধির পাওয়ায় ড্রেন বা ছড়ার পানি নদীতে যেতে পারছে না। বরং উল্টো নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে নগরীর দিকে। যার কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি সময়মতো নদীতে ড্রেজিং না করানোকেই দোষারোপ করছেন। এ ব্যাপারে তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, পানি উন্নয়নবোর্ড যদি সময়মতো নদী খনন করতো তাহলে বর্ষা মৌসুমে নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সরমা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে নগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ছড়া বা খাল দিয়ে পানি উল্টো পানি শহরে ঢুকে নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। যার ফলে নগরীর বাসিন্দারা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। এসব এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলারদের মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া বিষয়টিকে সিসিক পর্যবেক্ষণে রাখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে পানিবন্দি বাসিন্দাদের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী আশ্রয়ে রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত