তাহিরপুর প্রতিনিধি

১৪ জুলাই, ২০২০ ১৩:১৪

‘১৬ বছরেও এতো পানি দেখিনি’

বিগত ১৬ বছরেও এতো পানি দেখিনি। আর এবারের বন্যা পরপর দুইবার দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় হাওরের ঢেউয়ের কারণে হাওরপাড়ের বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে আল্লাহ জানে। করোনার প্রভাবে আয় রোজগার নেই। এখনও ঘরের ভিতরে হাটু পানির উপরে এই অবস্থায় কোনরকমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আছি। পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে থাকার পরও কোন সহায়তা পাইনি। কেউ খোঁজও নেয় নি। এমনই কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণকুল গ্রামের সামনে হাওরে পানিতে ডুবে যাওয়া বসত বাড়িতে অবস্থানকারী আমির উদ্দিন (৫৫)।

গত শুক্রবার থেকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেওয়ায় চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করছে। পানি বৃদ্ধি, ঢেউ আর তীব্র স্রোতের কারণে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাহিরপুর উপজেলার সাথে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৩ জুলাই) বৃষ্টি না হওয়ায় হাওর ও নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত বন্যার পানিতে উপজেলার অধিকাংশ ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক পানিতে ডুবে আছে।

যদি বৃষ্টি না হয় তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা যায়, উপজেলার ৩৩৬ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ২৩টি ছোট-বড় হাওর রয়েছে। ইতিমধ্যে পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে উপজেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৭টি ইউনিয়নের ২৩০টি গ্রাম ও ১৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকে হাঁটু পানি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে পানি ঢুকে পড়ায় নিচতলার সকল চিকিৎসা কার্যক্রম গত ৫ দিন ধরে দ্বিতীয় তলা থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। আর পাহাড়ি ঢলে নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম ও কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে ও নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এছাড়াও উপজেলার ছোট বড় ৩৫ হাট বাজার, উপজেলা পরিষদসহ অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সড়ক পানিতে প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ ও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছে। আর পানি বৃদ্ধি আর ঢেউয়ের কারণে উপজেলার দুই হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাওরপাড়ের এক হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ধ্বসে হয়ে পড়েছে। বসতঘরে পানিতে ডুবে যাওয়ায় গবাদিপশু আর গোখাদ্য (খড়) নিয়েও বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক পরিবার।

তাহিরপুর উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, বন্যায় তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তাহিরপুর অংশে ১০ কিলোমিটার সড়ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২৫ জুন থেকে জেলা শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ ৩০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা বেগম জানান, এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আর ঢেউয়ের কারণে হাওরপাড়ের বসত বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বন্যার শুরু থেকেই বন্যায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর খোঁজখবর ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছি। আমি আমার ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে যাওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি মানুষকে প্রশাসন পাশে থেকে সহায়তা করছে। আর সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে দুইবার বন্যায় উপজেলার ৮০ ভাগের বেশি এলাকায় সাগরের মতো রূপ ধারণ করেছে। এর মধ্যে ভেসে থাকা হাওরপাড়ের গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানি আর ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, করোনার প্রভাবে উপজেলার নিম্ন আয়ের লোকজনের আয় রোজগার নেই, কোন পথও খোলা নেই যে কাজ করবে। এর মধ্যেই গত মাসের শেষের দিকে প্রথম দফা বন্যা শুরু হলেও আবারও বন্যায় অসহায় পরিবারের মানুষজন চরম দুর্ভোগে আছেন। তাদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত