নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ আগস্ট, ২০২০ ০২:৩৯

চামড়া নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

সিলেটে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। মিলছে না চামড়ার দাম। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

সিলেটে গরুর একেকটি চামড়া ২০ টাকা দামেও বিক্রি হচ্ছে। আবার দাম না পাওয়ায় ছাগলের চামড়া বিনামূল্যেও বিতরণ করতে দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ীকে।

এ বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করেছে। সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির কাঁচা চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে শনিবার ঈদের দিনে নগরীর রেজাস্টারি মাঠ ও ঝালোপাড়া চামড়ার আড়ৎ ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে বসে আছেন কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। কিছু ক্রেতা এলেও সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছেন না কেউই।  

বড় আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৭০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কিন্তু ছোট আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে দরে চামড়া বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

খুচরো পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা বেশি দাম দিয়ে প্রতি পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা, যারা ট্যানারিতে নিয়ে চামড়া বিক্রি করেন, তারা নানা কারণ দেখিয়ে দাম বেশি দিতে নারাজ। এতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে।

সিলেট জালালাবাদ বহুমুখী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামীম আহমদ জানান, এবার কোরবানির ঈদে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক চামড়াও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া চামড়ার দামবো মিলছে না।

তিনি জানান, একদিকে ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা নেই। অন্যদিকে চার বছর ধরে আড়তদার আর ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে। এবার মাত্র ২৫ শতাংশ পাওনা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কোরবানির পশুর চামড়া সিলেটে এ বছর গতবারের চেয়ে অর্ধেকেরও কম দামে কেনাবেচা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের কথার সাথে মিল রেখে দয়ামীর দারুল কোরআন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশাহিদ আলী বলেন, সিলেটে এ বছর পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। গত বছরও যে চামড়া ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এ বছর তার অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসায় অনুদান হিসেবে পাওয়া চার শতাধিক চামড়া প্রতিটি দুইশ-আড়াশ টাকায় বিক্রি করেছি। সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় কয়েকটা চামড়া বিক্রি করতে পেরেছি। গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে এত কম দাম দেখিনি।

নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুট হিসেবে নয়, মৌসুমি ক্রেতারা চামড়া কিনছেন আকার ভেদে। প্রতিটি গরুর চামড়া ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় কিনেছেন তারা।

কয়েক বছর ধরে চামড়া ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে বলে জানিয়ে সমিতির সহ-সভাপতি শাহিন আহমদ বলেন, সিলেটের তিন শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ীর মধ্যে বেশির ভাগই এ বছর ক্ষতির আশঙ্কায় চামড়া কেনেননি। এই সুযোগে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কম দামে চামড়া কিনে নিয়েছেন। কম দামে কিনলেও তারা লাভ করতে পারবেন তা এখনও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

নগরীর সর্ববৃহৎ চামড়ার আড়ত ঝলোপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা চামড়া প্রক্রিয়াজাত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চামড়া ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে রাখলেও শ্রমিক খরচসহ আনুষাঙ্গিক সব খরচ শেষে লাভের মুখ দেখা নিয়ে সংশয়ে আছেন তারা।

ঝালোপাড়া এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী আজাদ আহমদ বলেন, ঢাকার আড়তদারদের কাছে লাখ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে আমাদের। টাকা চাইলে তারা নানা অজুহাত দেখান। এবার সামান্য টাকা পাওয়া গেছে। ব্যাংক ঋণ ও ধার-দেনার টাকায় কিছু চামড়া সংগ্রহ করেছি। এগুলোরও দাম মিলছে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত