নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০১:৫৬

ছাত্রাবাস দখল করে ছাত্রলীগের মাদক ও জুয়ার আস্তানা

এমসি কলেজ ছাত্রাবাস

করোনার কারণে ছয় মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ সিলেট এমসি কলেজ। অথচ খোলা ছিলো ছাত্রাবাস। মূলত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই বন্ধের সময়ে ছাত্রাবাসে থাকতেন। ছাত্রদের পাশপাশি অনেক অছাত্র ছিলেন ছাত্রাবাসে। ছাত্রাবাসে থেকে নানা অপরাধ সংঘটিত করতেন তারা। এমনকি ছাত্রাবাসকে মাদক ও জুয়ার আস্তানায় পরিণত করেছিলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

শুক্রবার এই ছাত্রাবাসেই এক তরুণীকে ধরে এনে স্বামীর সামনে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মী। এই ধর্ষণকাণ্ডের পর ছাত্রাবাসের ভেতরে ছাত্রলীগের নানা অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে।

মাদক ও জুুুুুয়ার পাশাপাশি  ছাত্রাবাসের ভেতরে অবৈধ অস্ত্রেরও মজুদ করেছিলো ছাত্রলীগ। ধর্ষণের পর শুক্রবার রাতে ছাত্রাবাসের ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।


ছাত্রশিবিরের সাথে সংঘর্ষের জেরে ২০১২ সালে এই ছাত্রাবাসই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় দেশবিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি বিচারিক কার্যক্রম। শাস্তি পায়নি কেউ। ফলে আরও বেপোরোয়া হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ছাত্রাবাসের জায়গায় ২০১৪ সালে নতুন ছাত্রাবাস নির্মিত হলেও তারও দখল নেয় ছাত্রলীগ। নিয়মিত ছাত্রদের পাশপাশি অনেক অছাত্ররাও আস্তানা গাড়ে এখানে। এই করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়ও ছাত্রাবাস ছাড়েনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের চাপে ছাত্রাবাস বন্ধ করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন



ছাত্রাবাসের সংশ্লিস্ট ও আশপাশের একাধিক বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কলেজ বন্ধ ও ছাত্রাবাসে সাধারণ ছাত্ররা না থাকার সুযোগ সম্প্রতি আরও বেপোরোয়া হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। ছাত্রাবাসকে তারা নানা অপকর্মের আস্তানায় পরিণত করে। মাদক সেবনের পাশপাশি ছাত্রাবাসের ভেতরে মাদক বিক্রি হতো বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। এছাড়া ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়মিত জোয়ার আসর বসতো বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।    

এছাড়া এমসি কলেজে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নানা সময় হয়রানি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্থে। বিশেষত নারী দর্শনার্থীদের হয়রানি ও অনেক সময় শ্লীশতাহানির শিকার হতে হতো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রশ্রয়েই তারা এসব অপকর্ম চালিয়ে আসতো বলেও অভিযোগ পাওয় গেছে।

তবে এমসি কলেজের এই ছাত্রবাসের তত্ত্বাবধায়ক জামাল উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বন্ধের সময়ে কিছু ছাত্রকে মানবিক কারণে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরইমধ্যে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সালেহ আহমদ বলেন, জুয়া বা মাদকের আসর বসানোর কোনো অভিযোগ আমরা আগে পাইনি। তবে কলেজ ছাত্রাবাসে তাদের (ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের) সিট না থাকলেও মাঝে মধ্যে গিয়ে তারা ছাত্রাবাসে থাকত, এমন তথ্য পেতাম। এটি শুনে আমরা তাদের একাধিকবার ডেকেছি, থাকার কারণ জানতে চেয়েছি। তখন তারা বলত, ‘স্যার, মাঝেমধ্যে যাইটাই। ওখানে আমাদের বন্ধুরা থাকে।’ তারা দিনে থাকে না, রাতে গিয়ে বন্ধুর রুমে থাকছে, এটুকু জানি আমরা। আমরা সার্বক্ষণিক এগুলো মনিটরিং করি।

বিজ্ঞাপন



তিনি বলেন, যাদের সঙ্গে ওরা (গণধর্ষণকারী) এত দিন চলাচল করেছে, এখন তারাই এদের বিরুদ্ধে নানা তথ্য দিচ্ছে, অভিযোগগুলো জানাচ্ছে। অথচ এরাই এত দিন কিছু বলেনি, বরং তাদের সমর্থন করেছে।

কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলেজ চালু হলে এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। এখানে সবাই ছাত্র, এটাই তাদের একমাত্র পরিচয়। যখনই ক্যাম্পাসে ছিনতাই কিংবা অন্য কোনো অপকর্মের অভিযোগ পেয়েছি, তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি, নিচ্ছি।
আবার এটাও ঠিক, অনেকে সন্ধ্যার পর নীরব হয়ে যাওয়া কলেজে অবস্থান করেন। সেখানেও দর্শনার্থীদের সচেতন হতে হবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন যে কেউ, কিন্তু সন্ধ্যার পর এখানে থাকা ঠিক নয়। এসব বিষয়েও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কলেজ এলাকায় পুলিশি টহল আরও বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত