নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ অক্টোবর, ২০২০ ২২:১৫

এক সাংবাদিকের সহায়তায় সিসিটিভি ফুটেজ পাল্টে দেন এসআই হাসান!

পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রয়হান হত্যা

সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যান নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদ (৩৪)। এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে সিসি ক্যমেরার ফুটেজ পাল্টে দেন বন্দর ফাঁড়ির সেকেন্ড ইনচার্জ (টুআইসি) এসআই হাসান উদ্দিন। তাকে এই কাজে সহযোগিতা করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক।

সিলেট মহানগর পুলিশের একাধিক সূত্রের সাথে আলাপ করে এমন তথ্য জানা গেছে।

কেবল ফাঁড়ির সিসিটিভি ফুটেজ পাল্টে দেওয়াই নয়, রায়হানকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির সদ্য বহিস্কৃত ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে পালিয়ে যেতেও এসআই হাসান সহায়তা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (২১ অক্টোবর) এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন।

গত ১১ অক্টোবর পুলিশি নির্যাতনে রায়হান নিহতের পর ১২ অক্টোবর পালিয়ে যায় প্রধান সন্দেহভাজন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর। তার পালিয়ে যাওয়া নিয়ে পরবর্তীতে আরও একটি তদন্ত কমিটি করে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)।

সাময়িক বহিস্কৃত পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) হাসান উদ্দিন।

তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, এসআই হাসান উদ্দিন ও স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিক মিলে ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন করে নতুন হার্ডডিস্ক সংযোজন করে। স্থানীয় একটি পত্রিকার সেই সাংবাদিক গ্যালারিয়া শপিং সিটির ফ্রেন্ডস কম্পিউটার নামের এক দোকান থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় ৫০০ গিগাবাইটের একটি হার্ডডিস্ক ক্রয় করে, যার ইনভয়েস নম্বর ২৪৬০২। সেই মার্কেটের সিসি টিভির ফুটেজও সংগ্রহ করে তদন্ত কমিটি। এরপর সেই সাংবাদিক কম্পিউটারের দোকান থেকেই একজনকে নিয়ে যান সেই হার্ডডিস্ক পরিবর্তনের জন্য।

তদন্ত কমিটির মতে, এসআই  হাসান উদ্দিন ওই কাজে সহায়তা করেছেন। এর পাশাপাশি এসআই হাসান উদ্দিন ঘটনার দিন সেই সাংবাদিকের সঙ্গে ৪০ বার এবং এর আগের দিন ১৯ বার কথা বলেছেন। এছাড়া হাসান উদ্দিনের বিরুদ্ধে এসআই আকবরকে পালানোর সহায়তার অভিযোগও পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

বিজ্ঞাপন



তদন্ত কমিটির সূত্রমতে, ১২ অক্টোবর বিকাল ৩টায় আকবরসহ ৪ জনকে বরখাস্ত করা হয়। বিকাল ৩টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত সে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ছিলেন। তার অস্ত্র সমঝে নেয় এসআই হাসান। সেখান থেকেই আকবর পালিয়ে যান।

এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, হাসান উদ্দিনকে কড়া পুলিশ প্রহরায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তাকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা- তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে। গ্রেপ্তারের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা চাইলেই এসএমপি তাদের কাছে হস্তান্তর করবে বলে জানান তিনি।

এসআই আকবর পালিয়ে যাওয়ার সাথে আর কোনো পুলিশ সদস্য সমম্পৃক্ত কি না তা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ওই কমিটি সিলেট এসে তদন্ত কাজ শুরু করে। এরপরই আকবরের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে এক পুলিশ সদস্যকে বহিস্কার করা হলো।

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর ভোরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন রায়হান আহমদ (৩৪) নামের এক যুবক। পরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান। রায়হান সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন।

এই ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হেফাজতে মৃত্যু আইনে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী।

এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।

এ মামলায় ২০ অক্টোবর মঙ্গলবার পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। সূত্র : যুগান্তর

আপনার মন্তব্য

আলোচিত