মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ১৬:০৫

সুনামগঞ্জে আলোচনায় এগিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীরা

দ্বিতীয় দফার পৌরসভা নির্বাচনের দেশের ৬১টি পৌরসভার মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌরসভায়ও নির্বাচন আগামী ১৬ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সুনামগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত  প্রার্থীসহ তিনজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাদের বখতকে একতরফা বিজয়ী ধরেই নিয়েছে পৌরসভার মানুষজন। যার কারণে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে পৌর এলাকাগুলোতে তেমন আলোচনা না থাকলেও মাঠ গরম করে রেখেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

নির্বাচন অফিস জানায়, দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে সুনামগঞ্জে তিনজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক মেয়র নাদের বখত, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুর্শেদ আলম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ্। এছাড়া সুনামগঞ্জ পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৪৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রয়েছেন ১৩ জন প্রার্থী। এছাড়া সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৬টি কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ৪৭ হাজার ১৫ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ২৩৮ এবং নারী ভোটার রয়েছেন ২৩ হাজার ৭৭৭ জন।

এদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে পৌরসভায় নির্বাচনে ভোটের হাওয়ায় মেয়র প্রার্থীদের নিয়েও আলোচনা কেন্দ্র হওয়ার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জের প্রতিটি মানুষের মুখে কাউন্সিলর প্রার্থীদের আলোচনা। সাধারণ ভোটারাও মনে করে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহন হলে নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুনামগঞ্জে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাদের বখত তার বড় ভাই আইয়ুব বখত জগলুলের অকাল প্রয়াণের পর উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মেয়র হয়েছিলেন। টানা দুইবছর নাগরিকদের পাশে থাকায় এবং বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী বেছে নেওয়ায় নির্বাচনে মেয়র পদে তেমন কোন আগ্রহ নেই সাধারণ ভোটারদের।

বিজ্ঞাপন

সরজমিনে,  সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখাযায়, নির্বাচনে আলোচনায় মেয়র প্রার্থীরা না থাকলেও পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাজারগুলোতে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে আলাপচারিতা। প্রার্থীদেরও প্রচারণার শেষ নেই, প্রতিনিয়ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন মানুষের কাছে নিচ্ছেন তাদের আশীর্বাদ ও দোয়া। তবে এবারে ভোটে তরুণ ভোটারদের দিকেই নজর দিচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিভিন্ন সভা গণসংযোগে তরুণ ভোটাদের কাছে ভোটের বার্তা ও ওয়ার্ডবাসীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে তরুণ ভোটাররা যোগ্য ব্যক্তিকেই দেখে শুনে ভোট দিবেন বলে জানান। অন্যদিকে নাগরিক অসুবিধার কারণে মাইকিং বন্ধ করে দিয়েছেন মেয়র প্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলররা যার মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড অন্যতম। এছাড়া এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকজন তরুণ প্রার্থীও মাঠে থাকায় কাউন্সিলর পদে পরিবর্তন হবে বলে জানান ভোটাররা।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা পূর্ণেন্দু তালুকদার সৌরভ বলেন, আমাদের ৪নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই পরিচিত। তাদেরকে নিয়েই আমাদের আলোচনা একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাড়া মহল্লার আড্ডায় এখন কাউন্সিলর প্রার্থীদেরই কথা তবে নতুনত্ব ছোঁয়া হয়তো এই ওয়ার্ড পাবে বলে ধারণা করছি।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, আমরা প্রার্থী হিসেবে সাবেক কাউন্সিলর আবাবিল নূরকেই বিজয়ী দেখতে চাই। কারণ তিনি করোনা মহামারীর সময়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং অসহায় ও দরিদ্রদের খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া এ ওয়ার্ডের উন্নয়নেরও তিনিও কাজ করে যাচ্ছে। এ ওয়ার্ডে আরও ২ জন প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৯ জন প্রার্থী। এবারের সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী এই ওয়ার্ডেই। সেক্ষেত্রে এ ওয়ার্ডের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা চলছে সবসময়। ভোটার সংখ্যা কম হওয়ায় ৯ জন প্রার্থী ভোটের সংখ্যা ব্যবধানে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে জানান ভোটাররা। তবে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর গোলাম সাবেরীন ও কাউন্সিলর প্রার্থী বিমান কান্তি রায়। সাধারণ ভোটারদের ধারণা ৯ প্রার্থীর চাইতে এই দুই প্রার্থীই ভোটের দিন বড় কোন চমক দেখাতে পারে।

৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃণাল সায়েম বলেন, নির্বাচনে আমাদের ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৯জন। তবে দেখা যাচ্ছে ভোটের মাঠে সাবেরীন সাবু ও বিমান কান্তি রায়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তাদের নিয়েই আলোচনা হচ্ছে সব জায়গায় এছাড়া অন্যান্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন দেখা যাক ভোটের দিন কি হয়।

সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বোরহান উদ্দিন বলেন, পৌরসভাকে যারা কলঙ্কিত করেছে তাদেরকে সাধারণ মানুষরা ভোট দেবে না। আমি আশাবাদী আমি নির্বাচনে জয়ী হবো সাধারণ মানুষ আমাকে খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। কাউন্সিলর পদে জয়ী হলে অবশ্যই আমার পাওয়া ৫ বছর আমি সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করে যাব।

বিজ্ঞাপন

একই ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী মিন্টু চৌধুরী বলেন, আমি আগেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম তবে বিজয়ী হতে পারিনি তবে এবার আমি আশাবাদী নির্বাচনে জয়ী হবো। আমি মানুষজনের কাছে গিয়েছি আমার পরিকল্পনাগুলো তাদের জানিয়েছি তারাও আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন ভোট দিবেন এখন নির্বাচনে অপেক্ষা।

সুনামগঞ্জ ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ ইয়াছিনুর রশিদ বলেন, আমাকে আমার ভোটাররা দাড় করিয়েছেন। আমি তাদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি বিগত নির্বাচনেও তারা আমার পাশে ছিলেন আমি আশাবাদী বর্তমানেও তারা আমার পাশে থাকবেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাদের বখত ও তার সমর্থকরাও অন্যান্য সময়ের মতো প্রচার প্রচারণায় খুব বেশি একটা দেখা যায়নি। বরং দলীয় নেতাকর্মীরা বিজয় ধরে নিয়েই বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত মতবিনিময় করছেন তারা। ক্ষমতাসীন দলের মেয়র মনোনীত প্রার্থী নাদের বখতও সেসব মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হচ্ছেন। তবে ক্ষমতাশীল দলের মেয়র প্রার্থীর কাছে বাকি ২ প্রার্থী তাদের ইমেজ নিয়ে সংকটে পড়লেও ভোটের মাঠে লড়ছেন তারা। তবে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “নির্বাচনে যাকে প্রার্থী করা হয়েছে তিনি ব্যক্তি বিশেষের প্রার্থী, দলের কিংবা জোটের নয়। তাকে প্রার্থী করার ব্যাপারে কারো সাথে পরামর্শ করা হয়নি। সুনামগঞ্জের অভিভাবক বেগম জিয়ার উপদেষ্টা ফজলুল হক আছপিয়া, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, ভোটের মাঠে যার পরিবারের শক্তিশালী অবস্থান তাদের কারোরই মতামত নেওয়া হয়নি।  বিএনপি প্রার্থী মোর্শেদ আলম যে নির্বাচনী ফিগার না সেটা পুরো জেলাবাসী জানে। ব্যক্তিগতভাবে ভাল মানুষ কিন্তু প্রার্থী হিসেবে দুর্বল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও ১৬ জানুয়ারি যে ফলাফল আসবে সেটা হবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।

সুনামগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক মেয়র নাদের বখত বলেন, আমার বড় ভাই মারা যাওয়ার পর আমি উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করি, আমি চেষ্টা করেছি আমার ভাইয়ের সুনামগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে যে উন্নয়ন পরিকল্পনা করে গিয়েছিলেন সেগুলো কিছুটা হলেও করে দেখাতে, তবে আমার কাজ শেষ হয়নি। দল এবারও আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং আমিও সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে আবারও নিয়ে যেতে পারবো। নৌকার বিজয় হবে ইনশাল্লাহ। দলের সকল নেতাকর্মীরা আমাকের সহযোগিতা করছেন এবং আমি ভোটারদের কাছে যাচ্ছি তারাও আমাকে গ্রহণ করছেন।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মুর্শেদ আলম বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে তাই আমি প্রার্থী হয়েছি। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে বিজয় আমাদেরই হবে। সবার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি গণসংযোগ করতেছি মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাচনী কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচনে পরিস্থিতি এখনও ভালো রয়েছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত