নিজস্ব প্রতিবেদক ও মাধবপুর প্রতিনিধি :

১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:৩১

২৪ বছরেও নিজস্ব ঠিকানা পায়নি প্রথম শ্রেণির মাধবপুর পৌরসভা

প্রায় ২৪ বছরেও নিজস্ব ঠিকানা পায়নি হবিগঞ্জের মাধপুর পৌরসভা। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে উপজেলা পরিষদের একটি ভবনকে কার্যালয় বানিয়ে চলছে কার্যক্রম। ২০১২ সালের দিকে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। এরপর ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা ক্রয় ও টেন্ডার হয়। কিন্তু মামলা জটিলতায় পড়ে একটি নিজস্ব ভবন আর কোথাও মাথা তুলতে পারেনি।

প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম। এরমধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা প্রধান। তবে পৌরসভার মেয়র হিরেন্দ্র লাল সাহা জানান, ‘নাগরিকদের জন্য বড়-বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হচ্ছে মামলা। একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরই মামলা ঠুকে দেওয়া হয়।’

মাধপুর পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে মাধপুর পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এদিকে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে উপজেলা পরিষদের একটি ভবনকে কার্যালয় বানিয়ে মাধপুর পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। সেই ভবনটিই এখনো কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১০৭ জন ও নারী ভোটার ৭ হাজার ৮৮০ জন। ২০১২ সালে পৌরসভাটি ‘ক’ গ্রেডে উন্নীত হয়। এরপর মেয়র ভবন নির্মাণ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ বেশ বড় প্রকল্পের উদ্যোগ নেন। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন মামলা ঠুকে দেওয়ায় উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। এখনও মামলা চলছে। এ সংকটের কারণে এখন পর্যন্ত নিজস্ব পৌর ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় নাগরিকরা পৌরসভার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) শহরের হাসপাতাল রোড এলাকায় কথা হয় রিকশা চালক এনু মিয়ার সাথে। পৌরসভার নাগরিক এনু মিয়া বলেন, ‘আমরা ভোট দেই মেয়র, কাউন্সিলর হখল পাশ করেন। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। আমরা উন্নয়ন চাই। শহরে রিকশা চালাই। বৃষ্টি হলে শহরের রাস্তায় পানি জমে। খুব কষ্ট হয়।’

স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ জাহান রনি বলেন, ‘পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না। কিন্তু এটা প্রথম শ্রেণীর একটা পৌরসভা। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার ভোগান্তি বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত নিজস্ব একটি ভবনও তৈরি হয়নি।’

কথা হয় কাশেম মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘গত ৮ বছর পৌরসভা প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার প্রধান কাজ হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে পৌর এলাকাকে স্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত করা। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলবদ্ধার অবস্থা শোচনীয়।’

ভবনের বিষয়ে মুঠোফোনে আলাপকালে পৌরসভার মেয়র হিরেন্দ্র লাল সাহা বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বলেন, ‘নিজস্ব ভবনের ইতিহাস তো অন্যরকম। বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। টানা দুই বারের মেয়র আমি। প্রথমবার যখন দায়িত্ব নেই, তখন পৌরসভার ছিল দেনা ছিল ৭০ লক্ষ টাকার উপরে। ১ ডিসিমেল জায়গাও ছিল না পৌরসভার নিজস্ব। স্টাফের বেতন ছিল চার মাসের বাকি। সম্মানী ছিল প্রায় ১ বছরের বন্ধ। দেনা পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিকভাবে লাভজনক করি। এরপর মানুষের আস্থায় নিয়ে আসি। সরকারের টার্গেট পূরুণ করায় প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হয়। পরে ভবনের চিন্তা করি। খাস জায়গা দরকার। এখানে খাস জায়গা নেই। জায়গা ক্রয় করি। ভবন সব কাজের টেন্ডার হয়। এরপরই একটি মহল মামলা করে দেয়। মামলার কারণে ভবন নির্মাণ কাজটি আটকে যায়। এখনও মামলা চলছে।

তিনি আরও জানান, টেন্ডার হওয়ার পর ঠিকাদার কাজ করতে আসছিল। একটি চক্র ফোনে মামলার হুমকি দেওয়ায় ঠিকাদার চলে যায়। এভাবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত